প্রথম পর্ব এক
গঙ্গাচরা থানার মাছমারা গ্রামের ছেলে তরফ হাওলাদার রংপুর শহরে রহমত সর্দারের বাড়িতে থেকে তার মেয়ে সোনাভানকে পড়ায়। সোনাভান ক্লাশ সেভেনে পড়ে। দেখতে দেখতে তরফ আইএ, বিএ পাশ করল। সোনাভান মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর তরফ সোনাভানের বাড়িতে থেকে ওকে পড়িয়েছে।
তাদের মাঝে প্রেম ভালোবাসা হওয়ার অনেক সুযোগ ছিল কিন্তু তা হয়নি। এ এক আশ্চর্য ঘটনা। তরফ গ্রামের গরিব চাষীর ছেলে। ওর মাঝে আবেগ আছে,আছে ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতি। এমন বয়সে ছেলেরা মেয়েদেরকে প্রেম নিবেদন করে। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর একসাথে থেকেও তরফ কোনদিন সোনাভানকে প্রেম নিবেদন করেনি।
তাদের মাঝে ‘একটা কিছু’ আছে, তা লোকে বলতে পারে।
তরফকে নিয়ে সোনাভান ভাবলেও এসবকে খুব একটা বেশি গুরম্নত্ব দিতে সে রাজী নয়। সোনাভানকে ওর বন্ধু মধু জিজ্ঞেস করে,“তরফ ভাইকে তোর কেমন লাগে?”
সোনাভানের সোজা-সাপ্টা জবাব,
“ খারাপ নয়, তবে এসব নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে ভালভাবে বেঁচে থাকা উচিত। অভাব অনটন এসব ভাল কিছু না। নারীর জীবনে পুরুষের প্রয়োজন আছে, কিন্তু আমার মনে হয়,একজন নারীর জীবনে আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। সব পুরুষকে মেয়েরা কামনা করবে এমনটাও নয়,অবশ্য তাকে যে আমার অপছন্দ,তা বলছি না।”
মুখে এসব বললেও চৌদ্দ বছর বয়স পার হওয়ার পর থেকে সোনাভান নিজের মাঝে একটা পরিবর্তন অনুভব করে। তার চারদিকটা নানা রঙে কেমন যেন রঙিন হয়ে উঠছে! সব কিছুতে একটা ভালো লাগার অনুভূতি সোনাভানকে মাঝে মাঝে আচ্ছন্ন করে। মনের সব রঙ দিয়ে নিজেকে রাঙাতে চায়, চায় আরও কাউকে রাঙাতে। কিন্তু সে কে?
সোনাভান আশেপাশে অনেককে দেখে, সবাইকে ভালো লাগে এমনটা নয়, আবার কাউকে তেমন খারাপও লাগে না। তারপরও মনটা বিশেষ একজনকে কেন জানি খুঁজে, যাকে সে অনেক কিছু বলতে চায়, তার থেকে কিছু শুনতে চায়। সোনাভান লক্ষ্য করে পড়ার টেবিলে তরফ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন এভাবে তাকায় সোনাভান তা বুঝে। তরফের এভাবে তাকানোতে তার খারাপ লাগে না। তবু একদিন তরফকে প্রশ্ন করে ‘এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন