এই ব্লগ এবং লেখা সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত আপনি লেখককে মেইল ​​করে অথবা ফোন করে জানাতে পারেন. ই - মেইল ঠিকানা shaabdurrouf@gmail.com মোবাইলঃ +8801558313605 +8801911726884 এই নাম্বারে ।

Juari-part8(1nd)


আট
   রেল ষ্টেশনে এসে ট্রেনে উঠে শাহাজাদা বিরক্ত হয়।
   এটা কি ব্যবস্থা বলত? একেবারে উপর আর নিচ তলা, মাঝে কিছু নেই। কবীর খিক খিক করে হাসে।
   এটা তোদের জন্য। তোদের মত খানদানীদের টাইট দেয়ার জন্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশে যার টাকা নেই তার কিছু নেই। সে যত শিড়্গিত আর সম্ভ্রানত্ম হোক তাকে হিসেবে নেয়ার কোনো দরকার নেই। কবীর  মাঝে মাঝে এসব বলে,শাহাজাদা রাগে না। তবে আজ সে রেগে যায়,
   তোর সবটাতে যত ফাজলামো। আমার মনে হয় আরো কোনো অভিসন্ধি আছে?
   কি অভিসন্ধি দেখলি তুই? সাধারণ জনগনকে থার্ড ক্লাশ থেকে একেবারে সেকেন্ড ক্লাশে তুলে দিল, এর চেয়ে ভালো আর কি চাস?
   সেকেন্ড ক্লাশে উঠে তোর সুবিধা কি হল? টাকা নিচ্ছে বেশি কিন্তু সুবিধা বাড়েনি। শুধু নাম ছাড়া আর কি উন্নতি হয়েছে?
   আরে নামটাই তো সব। তোদের নামে যেমন আজোও গগন ফাটে। শাহাজাদা  কিছু বলে না,শুধু নিজের মনে গজগজ করে।


   কয়েকদিন থেকে সারাদেশে ভীষণ কুয়াশা পড়েছে। ফুলছড়ি ঘাট থেকে স্টীমার ছেড়ে আধা ঘন্টা চলার পর রাত দেড়টায় ফেরিটা একটা চরে এসে থেমে গেল। যাত্রীরা অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছে বা ঘুমে ঢুল ঢুল করছে। যারা ঘুমায়নি তারাও চোখে ঘুম নিয়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করছে, ফেরি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? 
   শাহাজাদা ঘুমায়নি। এমন অনেক রাত শেষ হয় কখন জুয়াড়িরা তা টের পায় না। কবীর ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের বেঞ্চে বাবা মার সাথে বসে থাকা একটা আটারো উনিশ বছরের মেয়ে বারবার শাহাজাদার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে! মেয়েটা সুন্দরী,যে কারো নজর কাড়বে। মেয়ের বাবাকে ভীষণ দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম মনে হয়, শাহাজাদার নজরে তা এড়াল না।
   মেয়েটার বাবা ভীষন দুশ্চিনত্মায় রয়েছে, মনে হয় তার দুশ্চিনত্মার কারণ মেয়েটা?
   শাহাজাদা আবার ওদেরকে দেখে।  লোকটার বয়স ষাট হবে হয়ত। বয়সের ভারে নয় দুশ্চিনত্মায় তাকে আরো বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে। বেঞ্চের মাঝে পা মুড়ে মেয়েটার কোলে মাথা রেখে সম্ভবত মেয়েটার মা ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা আর তার বাবার সাথে শাহাজাদার কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। তারা শাহাজাদাকে দেখছে,নিজেদের মাঝে কি যেন বলাবলি করছে?  ‘ওরা আমাকে নিয়ে কি কিছু বলছে? শাহাজাদা নিজের উপর বিরক্ত হয়।
   আমি বারবার তার দিকে তাকাচ্ছি কেন? যে দৃষ্টিতে আলেয়াকে দেখি, সেই একই দৃষ্টিতে কি তাকে দেখছি কেন?...তার কথা তো কিছু জানি না সেও কি আমাকে একই দৃষ্টিতে দেখছে, আমাকে নিয়ে ভাবছে? কিন্তু এমন ¯^í আলোয় তার চোখের ভাষা আমি পড়ব কি করে? আমি কি তার কিছু দেখছি না? ¯^í আলো বা রাতের আঁধার কি সবকিছু ঢেকে দেয়? সব ঢেকে দিলেও মনের ইচ্ছা বা ভাবনাকে কি তা ঢাকতে পারে? 
   --কিন্তু আমি এতসব ভাবছি কেন? আমি কি আমার ভাবনাকে দেখছি না? সেখানে আলেয়া ভিন্ন আর কিছু নেই। তবুও এসব কেন? এমন সব উচ্ছিষ্ট ভাবনা আমার মাঝে আসছে কেন? মেয়েটা বা অন্য কেউ, সে যত সুন্দর হোক না কেন? আলেয়ার মাঝে এমন কিছু আছে যা আর কারো মাঝে নেই, আমি দেখিনি, দেখব না। তার সাথে আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব জড়িয়ে আছে। থেকে কেউ আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। যদিও সবকিছু অনিশ্চিত তবুও জিতটাকে আমি দেখছি। জুয়াতে অজানা অনিশ্চিতের মাঝেও জিতটা দেখি, আমি শিহরিত হই, তবে তা স্থায়ী না। কিন্তু আলেয়ার সাথে নিজেকে জড়িয়ে সে অজানা শিহরণটা বারবার আমাকে শিহরিত করছে! সে শিহরণটা আমাকে প্রশ্ন করে,আলেয়া কি শুধুমাত্র কোনো নারী না কোনো মানবী?”
   এতসব ভাবনার পরও শাহাজাদা মেয়েটার দিকে আবার তাকায়। এবার তা আরো বেশি গভীর হল, তার মনে  প্রশ্নটা এল!
   মেয়েটা কি আলেয়ার চেয়ে সুন্দরী,...প্রেমময়ী?
   এভাবনাটা শাহাজাদাকে আরো বেশি বিরক্ত করে।
   এমনটা হচ্ছে কেন আমার? খেলায় প্রতিপড়্গ উল্টোপাল্টা খেলে আমাকে যেমন বিভ্রানত্ম করতে চায়, এমন কেউ কি আমাকে বিভ্রানত্ম করছে? কিন্তু আমি তো কাউকে দেখছি না? তা হলে সে কি অদৃশ্য কেউ?
   --না তা নয়! মেয়েটা সুন্দরী আর সবার মত আমার মাঝেও রয়েছে সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ। এটা বাসত্মব। আর বাসত্মবকে কে A¯^xKvi করতে পারে? আমি একে A¯^xKvi করছি না কিন্তু একে আমি পরাজিত করব। বড় বড় নামকড়া জুয়াড়িদের যেমন হারাই তেমনি একেও হারাব। কিন্তু আমি এত ভাবছি কেন? তার সাথে আমার কোনো বন্ধন,যোগসুত্র কি ছিল, না ভবিষ্যতে হবে?
   ভাবতে ভাবতে শাহাজাদা তন্দ্রচ্ছন্ন হয়। মুহূর্তে তা বেশ গভীর হল--সে ¯^cœ দেখে। বেশ ড়্গনিকটা পর কোলাহল আর হই চই তন্দ্রা কেটে ¯^cœUv তার ভেঙ্গে যায়।... ধরফর করে উঠে চারিদিক তাকায়। কবীরও ঘুম থেকে উঠে বসে শাহাজাদাকে এমন অস্থির দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,‘ কি হয়েছে তোর?’
   শাহাজাদা চারদিক তাকায়,কাউকে যেন খুঁজছে। সে কিছু বলে, কিন্তু তা স্পষ্ট হয় না, যেন বিড়বিড় করে।
   আমি দেখলাম বাড়ীর দীঘিটায় একা বসে মাছ ধরছি। কবীর কিছু না বুঝে বলে, মাছ ধরছিস?’
   হা দেখলাম আমি একা বসে মাছ ধরছি।...”  এবার তার কথাগুলো একটু একটু করে স্পষ্ট হতে লাগল,...
   গোঁধুলী লগ্নের ঠিক আগ-মুহূর্তে সচ্ছ পানিতে ভরা দীঘিটায় একা বড়শি ফেলে বসে আছি। কাশফুলে উঁচু পাড় দিয়ে ঘেরা দীঘিটাকে  মনে হল শুধু নিসর্গ নয়, নিসর্গকে ছাপিয়ে আরো কিছু ফুটে উঠছে যা আমি এর আগে দেখিনি। দু’টো হাঁস আপন মনে সাঁতার কেটে চলেছে। তারা কোনো শব্দ করছে না কিন্তু আমার একবার মনে হল পানির নিচে তাদের পা নাড়ার শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি। আর একবার মনে হল পা নাড়ার শব্দ না,যেন কোনো শিল্পির নিপুন হাতে বাঁজানো সঙ্গীতের সুর লহরী চারদিক অপূর্ব মূর্ছনায় ছড়িয়ে পড়ছে! কবীরের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। শাহাজাদার মুখে এসব কথা আগে কখনও সে শুনে নি! খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলে,
   আর যাই করি আমি কখনও প্রেমে পড়ব না।           
   কেন প্রেমে পড়লে কি হবে? কবীরের হাসি থামে না,
   প্রেমে পড়লে হাস মুরগী ছাগলের গান শুনতে হবে, এসব আমি শুনতে পারব না। এর চেয়ে প্রেম না হয় তাও ভালো এমনকি বিয়ে না হয় হোক, তবু এসব গান আমি শুনতে চাই না।
   শাহাজাদা অসহায় দৃষ্টিতে কবীরের দিকে তাকায়, বলতে চায়,
   আরো আছে শোন। কিন্তু বলে না , ¯^‡cœ দেখা দৃশ্যগুলোকে সে নিজে আবার দেখে।
   শুধু গান না একটা দৃশ্য। আহা কত মনোরম সে দৃশ্য যা শুধু আমি দেখেছি বলে আমার বিশ্বাস। গোঁধুলী লগ্নে কাঁশফুলে ঢ়াকা দীঘিটা শুধু না সবকিছু যেন আশ্চর্য এক নিরবতায় মুড়ে রয়েছে। আমার এখন মনে হচ্ছে কোনো নিরবতা নয়, তা ছিল পূর্ণতা। সব চাওয়া পাওয়া আকাঙ্খার অবসানে এক অনাবিল পরিতৃপ্তি। শুধু হাঁস দু’টো নড়ছে;তারা যেন ঠিক নড়ছে না, দীঘির চারদিক নিসত্মরঙ্গ নিশব্দ জলে সাঁতার কাটছে। এমন নিরবতার মাঝে একটা মুখ বারবার ভেসে উঠছে, আমাকে ডাকছে। আলেয়া ভেবে আমি মায়ের দেয়া হারটা তাকে পড়াতে যাই কিন্তু দেখি সে আলেয়া নয়। আমি অবাক হয়ে তার পাশে আলেয়াকে দেখি যেন কেমন বিবর্ন বিষন্ন হয়ে আছে? আমাতে বা মায়ের দেয়া হারটা নিয়ে তার কোনো উৎসাহ নেই। অন্য মেয়েটাকে সে কিছু বলছে না,আজন্ম এক দুঃখীনির দুঃখ নিয়ে আলেয়া নিরবে সব দেখছে। অন্যজন হাস্যেজ্জল যেন চির নতুন, সবকিছু তার সজীবতায় ভরা! মনে হল সে যেন সবুজে ভরা একটা বাগান যাতে নানা রঙ্গের ফুলের গন্ধ,সৌরভ ছড়াচ্ছে। গন্ধ সৌরভ বিলিয়ে চারদিক সে নেচে বেড়াচ্ছে।  আমি রেগে যাই বিরক্ত হই,তাকে তাড়াতে চাই, দূরে সরিয়ে দিতে চাই। কিন্তু অবাক হয়ে দেখি, আমার নির্দয় আর কঠোর ব্যবহারে সে দুঃখ পায় না, তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না, দূরে চলে যায় না,আরো ঘনিষ্ট হতে চায়,আমাকে তার মাঝে জড়িয়ে নিতে চায়। আমি সরে যেতে চাই কিন্তু কি আশ্চর্য! আলোর কাছে যেমন পতঙ্গ আসে তেমনি বারবার নিজের অজানেত্ম আমি তার কাছে ফিরে ফিরে আসি! একসময় দেখি আলেয়া নেই, শুধু সে আর আমি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যা দেখি,দেখি মায়ের দেয়া হারটা তার গলায় শোভা পাচ্ছে!
  -- হঠাৎ একটা নীল ঘোড়া পুকুড়টার পারে এসে দাঁড়াল। কিছু বুঝতে না বুঝতে নিজেকে আমি ঘোড়াটার উপর বসে থাকতে দেখি। ঘোড়াটা নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে। সহসা পুকুড়ের মাঝে প্রকান্ড এক তিমি মাছ ভেসে উঠে। তিমিটা তার বিরাট মুখটা হা করে পানি ভরে ঘোড়াটাকে লড়্গ্য করে পানি ছুড়তে থাকে। ঘোড়াটা একটা লাফ দেয়ার মত করে উড়ে গিয়ে তিমিটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছু বুঝতে না বুঝতে নিজেকে আমি তিমিটার পিঠে বসে থাকতে দেখি। তিমিটা আসেত্ম আসেত্ম আমাকে নিয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেল!
   --পানির নিচে তলিয়ে গেলেও আমার কোনো অসুবিধা হল না, খারাপ লাগল না। মনে হল কোনো পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমি আকাশে ভেসে বেড়চ্ছি, যদিও আমি এখন পানির নিচে। কিন্তু কি আশ্চর্য উপরের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে বিশাল নীল আকাশটা দেখলাম? লড়্গ কোটি তারায় ভরা আকাশটা ঝলমল করছে!
   -- তারারা সব নাচছে গাইছে, শুধু একটি বাদে। সে তারাটি ঝিকমিক করছে না। অন্যরা তাকে কলঙ্কীনি বলে গাল-মন্দ করছে। কেন জানি আমিও তাকে গাল-মন্দ করলাম। আমি অবাক হলাম গাল-মন্দে তার কোনো দুঃখ নেই,সে হাসছে! একবার মনে হল তার কোনো আলো নেই,যেটুকু আছে তা অন্যদের সামনে একাবারে নিসপ্রভ। তবুও সে হাসছে,...আমার দিকে আসছে। আমি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলাম, তাকে দূরে সরে যেতে বললাম। তারাটি দূরে সরল না, আমার আরো কাছে আসছে। সে যত কাছে আসছে তত উজ্জল হচ্ছে। সীমাহীন বিস্ময়ে অন্য তারাদের দেখছি নিসপ্রভ হতে, দূরে সরে যেতে! একসময় দেখি সে বিশাল আকাশটায় একটি তারা বাদে আর কোনো তারা নেই। এখন আমার কোনো ড়্গোভ বিড়্গোভ কিছু নেই। যদিও তাকে সরে যেতে বলছি কিন্তু আমি নিজে তার কাছ থেকে সরে যেতে পারছি না? অজানা এক আনন্দ আমার সবকিছুকে অবশ করছে। একসময় নিজেকে আমি ওই কলঙ্কীনি তারাটির মাঝে হারিয়ে যেতে দেখি! অবশেষে আমি হারিয়ে গেলাম, কোনো তারার মাঝে নয়;হারিয়ে ফেললাম নিজেকে,এক অভিরূপ যুবতীর অভিরতে! সে যুবতী অন্য কেউ না, একটু আগে দীঘির পারে যার গলায় মায়ের হারটা পরিয়ে ছিলাম সেই!”     
   শাহাজাদা বুঝতে পারে না, কেন এমন একটা ¯^cœ সে দেখল?
   কবীর সব শোনেনি। যেটুকু শুনেছে তাতে বুঝতে পারে নি শাহাজাদা কি বলল? ‘ওর কি মাথা খারাপ হল?’ ভয়ে ভয়ে শাহাজাদার দিকে তাকায়!
   মনে হয় তোর ঘুমটা এখনো পুরো হয়নি? আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নে, সব ঠিক হবে।
   শাহাজাদা প্রতিবাদ করে না,কবীরের কোলে মাথা রেখে ঘুমাল।

  

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites