এই ব্লগ এবং লেখা সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত আপনি লেখককে মেইল ​​করে অথবা ফোন করে জানাতে পারেন. ই - মেইল ঠিকানা shaabdurrouf@gmail.com মোবাইলঃ +8801558313605 +8801911726884 এই নাম্বারে ।

Juari-part2(2nd)


দুই
   পরদিন সকালে শাহাজাদার ঘুম ভাঙ্গল। সারারাত একটানা গভীর ঘুম ঘুমিয়ে জেগে উঠে তার ভালো লাগল। শরীরটা দূর্বল,তবু সবকিছু ভালো লাগছে। কিন্তু বিজলীকে না দেখে সারা ঘরময় চোখ দু’টো ব্যাকুল হয়ে তাকে খোঁজে। বিজলী এলে শাহাজাদার ব্যাকুলতার অবসান হল। শাহাজাদার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বিজলী বলে,
   এখন কেমন লাগছে? উত্তর না দিয়ে শাহাজাদা জিজ্ঞেস করে,
   এতড়্গণ কোথায় ছিলে? শাহাজাদার কন্ঠে অভিমান, খুব সহজেই তা বিজলীকে স্পর্শ করে। একটু ঝুঁকে মুখটা শাহাজাদার মুখের কাছে নিয়ে এসে আবেগঘন কন্ঠে বলে,
   রাগ কর না লক্ষ্ণীটি। সারারাত এ’ঘরে ছিলাম,তোমার ঘুম যেন ভেঙ্গে না যায় তাই সালমাকে বলে এলাম কি কি করতে হবে।...”
   বিজলীর কথায় শাহাজাদার মনে যে অভিমানের মেঘ জমেছিল তা কেটে গেল। অভিমানের মেঘ কেটে গেল, কিন্তু অজানা আর একটা মেঘ আরো ঘন হয়ে শাহাজাদার মনে গুর গুর করছে! সে কে? কি তার পরিচয়? তার নাম কি?
   তুমি বলছ তোমার নাম বিজলী কিন্তু আমার নাম কি? আমি কিছু মনে করতে পারছি না কেন?” খুব মিষ্টি করে বিজলী হাসল।
   ব্যসত্ম হচ্ছ কেন? তোমার নাম শাহাজাদা। হোটেলের রেজিষ্টারে নামটা লিখেছিলে। ঘাবড়িয়ো না, একটু সুস্থ হও সব জানবে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু ফুরসত পেলে বাকী সব খবর জোগার করব, তোমার বাড়ীতে খবর দিব। এখন নিয়ে আর ভেব না। তুমি শাহাজাদা আর আমি বিজলী,এখন এটুকু হলেই চলবে। শুধু এখন বলছি কেন সারাটা জীবন আমি শাহাজাদার বিজলী হয়ে থাকব। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
   বিজলীর মুখে একসঙ্গে এত কথা শুনে শাহাজাদা ঘাবড়ে যায়। কোনোরকমে উচ্চারণ করে,
   আপত্তি...! বিজলী তাকে বাধা দেয়,

   কোনো আপত্তি নয় কি বল? আমি তোমার বিজলী, তুমি আমার শাহাজাদা। ওহো ভাবতে কি ভয়ানক আনন্দ হচ্ছে আমার! মনে হয় এজন্যই আমি জন্মেছিলাম? বল, আমি ঠিক বলছি না?
   শাহাজাদা অবাক হয়, তার শুনতে ভালো লাগে,শুনে আনন্দ পায়। কিন্তু সে কে? ভাবনাটা তাকে বারবার ভাবাতে চায়। বিজলী তাকে ভাবতে দিতে রাজী না।  
   এভাবে তারা সারাটা দিন কথা বলল। শুধু সেদিন নয়, আরো তিনদিন,সাথে আরো তিন সন্ধ্যা! বিজলী বলল,প্রায় সব, শাহাজাদা শুনে যায়। চতুর্থদিন সন্ধ্যার পর বিজলী টেবিলের দেরাজ থেকে একটা হার বের করে শাহাজাদার সামনে ধরে বলে,
   হারটা তোমার পকেটে ছিল। তুমি পড়ে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে আমি সেখানে পৌঁছে যাই,এজন্য হারটা ওরা নিতে পারে নি। যদিও হারটা বেশ পুরানো,...পুরানো হলেও এর মাঝে একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া লেগে রয়েছে। হারটা কার?  
   হারটা কার?  প্রশ্নটা শুনে নয়, হারটা দেখে শাহাজাদা বিচলিত হয়!...সারা শরীরটা তার কেঁপে উঠে। শুধু শরীর নয়,মনের পর্দায় ওর এখন অনেককিছু কাঁপছে, ভীর করছে। প্রথমে খুব ধীরে কিন্তু সহসাই খুব দ্রম্নত সমসত্ম অতীতটা সামনে চলে এল। তার চেয়ে আরো দ্রম্নত একটা মুখ সবকিছুকে ঢেকে দিল। মুখটা আলেয়ার! শাহাজাদা বিজলীর দিকে তাকায়, নিজের অজানেত্ম প্রশ্ন করে,
   তুমি,তুমি কে? বিজলী চমকে উঠে, আমতা আমতা করে,...
   আমি বিজলী। তুমি আমাকে ভালোবাস। ভালোবাস না?           
   আমি তোমাকে ভালোবাসি? শাহাজাদার চোখ মুখে বিস্ময় আর বিরত্তি।
   আমি তোমাকে ভালোবাসি, কেন? আর কাউকে ভালোবাসবো কেন? আমি শুধু একজনকে ভালোবাসি, সে আলেয়া।
   বিজলীর চোখে বিস্ময়, মুখে হতাশা, তা সে লুকোতে পারে না। ভিতরটা গুমড়ে উঠে,মুখে কিছু বলতে পারে না। শাহাজাদা খুব মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখছে,এতে বিজলীর দুঃখটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু শাহাজাদার কোনো দুঃখ নেই। আলেয়ার প্রতি ভালোবাসার স্মৃতি ফিরে আসায় নিজের প্রতি শাহাজাদা ভীষণ ক্ষুব্ধ হল। খুব দ্রতু এবং সংড়্গেপে আলেয়াকে নিয়ে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিজলীকে বলে। বলতে বলতে বিজলীর করম্নণ মুখটার দিকে তাকিয়ে নিজের মাঝে ভয়ানক একটা আনন্দকে সে দেখে। নিজের মনের অবস্থাটা কেন হয় তা সে বুঝতে পারে না। এতদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সব ঠিকভাবে সে মনে করতে পারে না।  সে ভয়ানকভাবে আহত হয়েছিল এবং তার জন্য বিজলী অনেক কিছু করেছে, হয়ত তার জীবনটা বাঁচিয়েছে, শাহাজাদা শুধু এটুকু বুঝতে পারে। অনুভূতিটা বারবার তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায় কিন্তু সে তা মানতে রাজী না।
   বিজলী আমাকে নিয়ে খেলতে চেয়েছিল? সাধটা তার অপূর্ণ রয়ে যাবে। বিজলীকে নিয়ে এমন একটা ভয়ঙ্কর ভাবনা কেন আসে শাহাজাদা তা বুঝতে পারে না। বিজলীর দিকে আবার তাকাল। এবার তার খারাপ লাগল, অনুশোচনা হল।
   এমন একটা ভয়ঙ্কর ভাবনা কেন ভাবলাম? এমন একটা ভাবনা অন্যায় শুধু আমার জন্য না যে কারো জন্য। এজগতে সবাই সুন্দরের পুজারী,...তাকে দায়ী করা যায় না। বিজলী সুন্দরী,সবাই তার দিকে তাকাবে,তাকে কামনা করবে। আমি আলেয়াকে ভালোবাসি, তবু এখন বিজলীকে দেখছি! ইচ্ছায় নয়,অনিচ্ছায়...? বলব অনিচ্ছায়? কিন্তু তা সত্য না মিথ্যা, আমি জানি না? সে অন্য কাউকে ভালোবাসে না, তাই বলছে;হতে পারে তার সব ভাবনা আমাকে নিয়ে--হয়ত এতে দোষের কিছু নেই?
   শাহাজাদার খারাপ লাগল। বিজলীকে ভয়ানক করম্নণ অবস্থায় দেখবে এমনটা ভেবে বিজলীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে হতভম্ব হয়! শাহাজাদাকে অবাক হতে দেখে বিজলীর হাসিটা আরো জোড়াল হল।
   আমার অনুমান ভুল হয়নি। তোমাকে নিয়ে যা ভেবেছি তার কোনোটাই ভুল নয় আমি বেশ বুঝতে পারছি।
   আমাকে নিয়ে অনুমান? কি অনুমান করেছ তুমি? শাহাজাদা রেগে যেতে চায় কিন্তু নিজের কন্ঠে ক্রোধের অসিত্মত্ব খুঁজে না পেয়ে অবাক হয়! আমি কি তাকে তোঁয়াজ করছি?
   বিজলীর কণ্ঠে তোঁয়াজ নয়। 
   “এক শুক্রবার ঠিক দশটা ছাপ্পান্ন মিনিটে তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে, আর এক শুক্রবার ঠিক দশটা ছাপ্পান্ন মিনিটে তোমার জ্ঞান ফিরল, কেন? ব্যপারটা আমার অদভুত মনে হয়েছিল। তবে আমি অবাক হয়নি, যেদিন প্রথম তোমাকে দেখি সেদিন থেকে তোমার...”
   এতে অবাক হওয়ার কি হল? যে কোনো সময় কারো জ্ঞান ফিরতে পারে, নিয়ে ভাবার কি আছে?
   আছে। আছে বলেই ভাবছি। তোমাকে মাত্র ক’দিন থেকে দেখছি,দেখছি যত ভাবছি তত,... হয়ত তার চেয়ে বেশি?
  আমাকে নিয়ে ভাবনার কি আছে? আমার সম্পর্কে তুমি কিছু জান না, তারপরও আমাকে নিয়ে ভাবনার কি হল? প্রশ্ন নয়, শাহাজাদার ¯^‡i তাচ্ছ্যিল।
   বিজলীর মুখের হাসি ফুরায় না!
   তুমি মানো আর না মানো হচ্ছে এক বিশুদ্ধ হ্নদয় ঘটিত ব্যপার। সবাই বুঝবে না--তুমি তো একেবারে নও। আমি ভাবি না, ভাবে আমার মনটা, জানি না কেন? তোমাকে দেখে যে কোন মেয়ে ভাববে, এতে কোনো ভুল নেই। তোমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি তুমি সবার থেকে ভিন্ন। তোমার মাঝে এমন কিছু রয়েছে যা অন্যের মাঝে নেই...” শাহাজাদার বিরক্তিটা আরো প্রবল হয়।
   আমার কি আছে তা তোমাকে খুঁজতে হবে না। তুমি কে কি কর? তোমার কে কে আছে বল?”
   দেখ আমি আবার বলছি, বারবার বলব, অন্য যে কারো থেকে তুমি ভিন্ন। এই যে বললে আমি কি করি, আমার কে কে আছে? অন্য কেউ হলে প্রশ্নটা অনেক আগে করত। তুমি কর নি, তার অর্থ নয় যে তোমার কোনো কৌতুহল নেই? কৌতুহল আছে,আমাকে নিয়ে তোমার কৌতুহল যে MMYPzw¤^, আমি নিশ্চিত। আমার মত অনন্যা সুন্দরী যৌবনবতী এক নারী তোমাকে এভাবে জড়িয়ে রয়েছে, আর তাকে নিয়ে কৌতুহল হবে না এটা কখনো হতে পারে? আমি অন্য কোনো নারীর থেকে যে ভিন্ন, এমনকি আলেয়ার থেকেও ভিন্ন তুমি ভাবতে শুরম্ন করেছ। হয়ত বা তোমার মনে তা স্থায়ী হয়েছে। তাছাড়া একটা পুরম্নষ সে নিজে যত সুন্দর বা সুপুরষ হোক না কেন, আমার মত সুন্দরী কোনো ধনবতী নারীকে কাছে পেলে নিজেকে লুকাতে পারে না...মেলে ধরে। নিজের যা আছে জানাতে আর যা নেই তা জাহির করতে কাঙ্গালীপনার কিছু বাকী রাখে না। কিন্তু তোমার মাঝে রয়েছে এক আশ্চর্য গোপনীয়তার আঁধার যাকে মনে হয় কেউ স্পর্শ করতে পারে নি? কিন্তু আমি পেরেছি সে গোপনীয়তাকে জানতে তাকে ভাঙ্গতে। আহা! তোমার আবার কি হল? ভয়ে মুখটা শুকিয়ে গেল বলে মনে হয়? ভয় পেয় না, আমি কাউকে জানাব না। তোমার যা কিছু আছে সব আমার--কি বল? রাগ অনুরাগ ভয় ভীতি এমনকি ভনিতা। তোমার ভনিতা আছে বললাম বলে আবার রাগ কর না। ভনিতা সবাই করে, কারোটা বোঁঝা যায় কারোটা যায় না।
   আমি ভনিতা করি না ,আর অন্য কেউ করলে আমি তা পছন্দ করি না। শাহাজাদার কণ্ঠ আশ্চর্য রকমের শানত্ম দেখে বিজলী অবাক হয়! তবে খুব দ্রম্নত সে সামলে নেয়।
   তুমি ভনিতা কর তা বলছি না। তোমার মাঝে ভনিতা আছে তাই বলছি। অন্য যে কোনো পুরম্নষ নিজের রোগ শোক ভুলে আমাকে নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে পড়ত। আমার একটু গন্ধ,স্পর্শ বা  পরশ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠত! সবসময় ছোঁক ছোঁক করত, এতদিন তাই জানতাম--এই প্রথম আমার জানাটা ভুল হল। অবশ্য মনে মনে তুমি ঠিক ছোঁক ছোঁক...” শাহাজাদা বাধা দেয়, তার কণ্ঠে ব্যঙ্গ, বিদ্রম্নপ ঝনঝন করে বেঁজে উঠে।
   তুমি যা বলছ তাতে মনে হয় পুরম্নষদের সম্পর্কে তোমার জ্ঞান খুব গভীর?...তোমার একমাত্র কাজ কি পুরম্নষদের নিয়েই? মনে এবার বুঝতে পেরেছি তোমার কাজটা কি? পুরম্নষদের বাগানো,তাই না...? কথাগুলো বলতে পেরে শাহাজাদা নিজের উপর সন্তুষ্ট হল।
   কথায় বলে, ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর।’ এবার দেখি চাঁপার জোরটা? গভীর মনোযোগ দিয়ে সে বিজলীর মুখে,চেহরায় রাগ আপমান আর লজ্জা খোঁজে। শাহাজাদা অবাক হয়, হতাশ হয়! রাগ অপমান বা লজ্জা কোনোটাই বিজলীর চেহারায় সে দেখতে পায় না! বিজলীর মুখের হাসি মিলায় না, শুধু কণ্ঠটা একটু করূণ বলে মনে হল।
   কি করব বল? তোমাদের পুরম্নষদের ¯^fveUvB যে খারাপ। কোনো কাজের জন্য তোমাদের কাছে গেলে কামিনী কাঞ্চণ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বয়স যত বাড়তে থাকে গুণটা তত বেশি করে জেঁকে ধরে। কারো কারো অবস্থা এমন হয়...বলতে আমার লজ্জা করছে...শরৎ কালের খেঁকি কুত্তিদের মত! সুন্দরীদের ছাড়া তাদের কাছে কোনো কাজ বাগানো যায় না। যাদের কাছে গিয়ে আমি কাজগুলো বাগাই তাড়া তো আর হেন তেন পুরম্নষ নন? তারা এক একজন সমাজের তথা বাংলাদেশের মাথার মুকুট হয়ে বসে আছেন? সব ড়্গমতা আর দণ্ড মুণ্ডের মালিক তারা। আমার মত সুন্দরী যৌবনবতী নারীদের সান্নিধ্য না হলে তারা কোনো কাজ করতে পারেন না, করেন না। মাসের পর মাস ফাইলগুলো তাদের সামনে জমা হয়ে পড়ে থাকে, তাতে তারা ¯^vÿi করেন না। আমার মত কোনো সুন্দরী কলম হাতে তুলে না দিলে তারা ধরতে পারেন না। আমি পুরম্নষদের বাগাই তা নয়, তবে বলতে পার তাদের কাছে কাজ বাগিয়ে নিই...”
   তার মানে তুমি কর্লগার্ল! শাহাজাদার আর্তচীৎকারে বিজলী চমকে উঠে তার দিকে তাকায়,...কিছু বলে না।

   খুব বড় একটা ধাক্কা খেল শাহাজাদা। তার গোটা অস্থিত্বটা যেন নড়ে উঠল।
   তার পেশা কল-গার্ল, যার অন্য নাম পতিতাবৃত্তি? কিন্তু সে যাই হোক তাতে আমার তো কিছু যায় আসে না? তবু তার কথা শুনে আমার এমনটা হল কেন? সেতো আমার কেউ না? আমি তবু কেন যন্ত্রনা অনুভব করছি? আর তা এত প্রবল হয়ে আমাকে আঘাত করছে? সেদিন আলেয়ার বাড়ীতে যে আঘাত পেয়েছি যেন তাকে ছাড়িয়ে যেতে চায়? আশ্চর্য! তার মত এক দুশ্চরিত্রার জন্য আমার অনুভূতি কেন? বড় ভয়ানক! আমি কি তলিয়ে যাচ্ছি?”
   শাহাজাদার মুখে যন্ত্রণার ছাপটা সুস্পষ্ট। বিজলী তা দেখল কিনা বা বুঝতে পারল কি না...শাহাজাদা তা জানে না। কিন্তু বিজলীর মুখে কোনোকিছুর প্রকাশ নেই! বিজলী,বিজলীর মতই চমকাচ্ছে!
   তুমি এমন হায় হায় করে উঠলে কেন? আমার পেশাটা কি তোমার খুব অপছন্দ? প্রথম শুনলে,তাই হয়ত খারাপ লাগল? ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে কাজটা আমি বাদ দিয়ে দিয়েছি। কখন, কবে তা শুনবে? শাহাজাদা শুধু নিরব না সে যেন পাথর হয়ে গেছে। কিন্তু বিজলীর চমকের যেন শেষ নেই!
   প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিন থেকে। সেদিন থেকে নয়, বলতে পার সে মুহূর্ত থেকে সব বাদ দিয়েছি। অবশ্য কাজটা খারাপ এটা ভেবে নয়। আমি ওসব ভাবি না, এখন শুধু তোমার কথা ভাবি। আমার সবকিছু, সময় অসময় জীবন যৌবন সব তোমার জন্য ব্যয় করব।...শুধু তোমার জন্য। তুমি তো কিছু বলছ না?
   আধাশোয়া থেকে শাহাজাদা উঠতে চায়। কর কি,কর কি?’ বলে বিজলী ওর পাশে এসে কাঁধে হাত দিয়ে শাহাজাদাকে বাধা দেয়। উঠছো কেন, আমাকে বল কি দরকার।’ শাহাজাদা কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে দিতে চায়, পারে না। বিজলী বেশ শক্ত করে কাঁধটা ধরে আছে।
   আমি এখন যাব।” বিজলীর মুখের হাসিটা মিলায়। তবু সহজভাবে বলে,
   এই দূর্বল শরীর নিয়ে তুমি কোথায় যাবে, কেন যাবে?
   কোনো দূর্বলতা নেই আমার। আর থাকলেও তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।”
   আমি না ভাবলে আর কে ভাববে বল? তাছাড়া তুমি যাবে কোথায়?
   আলেয়ার বাড়ী যাব।
   আলেয়ার বাড়ী! বিজলী যেন আকাশ থেকে পড়ল।
   আলেয়ার বাড়ী গিয়ে কি করবে?  তার দেখা কি পাবে,না কি সে আজোও তোমার জন্য বসে আছে?           
   সে আমাকে ভালোবাসে, আমার জন্য সে সারাজীবন অপেড়্গা করবে।
   এমনটা তুমি আশা করতে পার, কিন্তু আমার ভয় হয়, তোমাকে না হতাশ হতে হয়?
   হতাশ হব? কখনো না। আমি তাকে ভালোবাসি, আমি তার ভালোবাসার গভীরতা জানি। আমার থেকে কেউ তাকে বিচ্যুত করতে পারবে না। প্রেম ভালোবাসার তুমি কি বুঝবে? তোমাকে বুঝাতেও চাই না। আমি যাব।
   বেশ যাও। তবে এখন না, সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এল। কাল সকালে যেও। আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
   তোমার এখানে রাত কাটাতে হবে? বিজলী হাসে।
   কেন,আমার এখানে রাত কাটালে আলেয়া কি তোমার উপর রাগ করবে? মনে হয় সে তা করবে না। শুধু আজকের রাত নয়;আমার মন বলছে তোমাকে বহু রাত,বহু রাত বলছি কেন,...সারাটা জীবন তোমাকে আমার সাথে কাটাতে হবে। যাক সেসব পরে দেখা যাবে, এখন তুমি আরাম কর, ঘুমাও। কাল সকালে সুস্থ দেহ মন নিয়ে যেন আলেয়ার কাছে যেত পার এই কামনা করি।
   শাহাজাদাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ বিজলী ঘর থেকে চলে গেল।

   বিজলী চলে গেল,শাহাজাদা এখন একা। ভয়ংকর এক একাকীত্ব চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরেতে চায়! সে বুঝতে পারে না কেন এমন হল! সুসজ্জিত প্রশসত্ম ঘরটা এখন যেন এক বদ্ধ কুটরী যার দেয়ালগুলো ধীরে ধীরে তার দিকে আঁটো হয়ে চেপে আসছে, শাহাজাদার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে! কিন্তু তা মুহূর্তের জন্য,নিজের উপর আস্থা আর বিশ্বাসকে সে স্পষ্ট দেখতে পেল।
   না, কেউ আমাকে আঁটকাতে পারবে না। বিজলীর সুরম্য অট্টালিকা তার ধন সম্পদ, রূপ যৌবন কোনোকিছু আমাকে চেপে ধরতে পারবে না। অজানেত্ম তার প্রতি দূর্বলতা,যাকে ভালোবাসা মনে হয়েছিল, তা থেকে এখন আমি সম্পূর্ন মুক্ত। এখন আমি এক মুক্ত মানব।  এক মুক্ত মানবকে কোনো বাঁধা আঁটকাতে পারে না, আমাকেও পারবে না।
   ভাবনাটা নিমেষে তার উপর চেপে বসা সব ভার থেকে তাকে মুক্ত করল। সে জানতে পারল না কখন তার বড় প্রিয় ঘুম তাকে ভিন্ন এক রাজ্যে নিয়ে গেছে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites