এই ব্লগ এবং লেখা সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত আপনি লেখককে মেইল ​​করে অথবা ফোন করে জানাতে পারেন. ই - মেইল ঠিকানা shaabdurrouf@gmail.com মোবাইলঃ +8801558313605 +8801911726884 এই নাম্বারে ।

Juari-part4(2nd)


চার
   শাহাজাদা বাড়িটার দিকে হাঁটছে, বিজলী যেন বুকের পাঁজরের উপর দিয়ে মড় মড় করে হেঁটে  যাওয়ার শব্দ পাচ্ছে!
   আমার বুকের ভিতরে তিক্ষ্ণ শলাকা দিয়ে কে যেন মোঁচড় দিচ্ছে? পাঁজরের হাড়গুলো মড়মড় করে ভাঙ্গছে,সর্বগ্রাসী কান্নার হু হু শব্দে চারদিকে ভয়াবহ শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ছে! শোক,শূন্যতা, হাহাকার ছাড়া আর কিছু নেই? ভয়াবহ এক একাকীত্ব আমার সবকিছু কেড়ে নিতে চাচ্ছে কেন? আমার চব্বিশ বছরের জীবনটা খুব কম সময়ের জন্য মসৃণ ছিল। প্রেমে ব্যর্থতা আর বিরহ যন্ত্রণায় এর আগেও আমি কাতর হয়েছি কিন্তু এমন করে শূন্যতা আর একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করেনি কখনও? সে চলে যাবার পূর্বমুহূর্তেও আমার সব ছিল। তার বিদায়ের সাথে সাথে  সবকিছ আমার শূন্য হল কি করে?
   --জানি তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি নই, কোনোদিন হয়ত হব না। কিন্তু তবুও কেন তাকে এতকিছু বললাম? এতসব ভাবছি বা কেন? জানি সে চলে যাবে,আমার প্রেম ভালোবাসা তাকে আঁটকাতে পারবে না। আমি তাকে আঁটকাতে চাইও না...। এক নষ্টা ভ্রষ্ট্রার প্রতি ঘৃণা আর উপেড়্গা ছাড়া আর কি কিছু আছে? এর বাইরে সে আর কিছু দিতে পারবে না। আমাকে ঘিরে কখনো কোনো সুখের ¯^cœ সে দেখবে না, সুখ সে পাবে না? সব আমি জানি,তারপরও কেন তাকে নিয়ে আমি ভাবলাম আর সে কি করে আমার সবকিছুেক এমন শূন্য করে  চলে গেল?
   এক ভয়াবহ শূন্যতাকে সাথী মেনে নিয়ে বিজলী বসে রইল। গাড়ীতে বসে বাড়ীটার দিকে সে তাকিয়ে থাকে,কিন্তু কোনোকিছু যেন সে দেখছে না! গাড়ী থেকে নেমে শাহাজাদার চলে যাওয়ার ছবিটা শুধু তার চোখের সামনে ভাসছে। কতড়্গণ তা জানে না, পিছনে একটা জোড়ালো হর্ণের শব্দে mw¤^Z ফিরে পেল।
   আমার গাড়ীটা তো একপাশে রয়েছে, তারপরও এতজোড়ে হর্ণ কেন? বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে পিছন দিকে তাকাতে গিয়ে সে গাড়ীর জানালায় এক ভিখারিকে দেখে। ভিখারি ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, সে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারে না।
সামনে ঝুঁকে একটা হাত দিয়ে নিজের শরীরটাকে গাড়ীতে ঠেকিয়ে বাকী হাতটা দিয়ে জানলায় শব্দ করছে। তার একটা পা পিছনে যাওয়ায় চিকণ গলিটায় পিছনের গাড়ীটা যেতে পারছে না। জানালা খুলে বিজলী একটা নোট দিলে সে চলে যায়। মুহূর্তে গাড়ীটা তার পাশ দিয়ে চলে গেল। বিজলী গাড়ীর আরোহীকে দেখল। তাকে নয়, তার ব্যসত্মতা সে দেখল।
   ওর এত তাড়া কেন? শুধু কি ওর? হয়ত সবাই এমন তাড়া নিয়ে ছুটছে, কিন্তু আমার কোনো তাড়া নেই!...একটু আগে ছিল,দীর্ঘদিন কত প্রয়োজন কত ব্যসত্মতা আমাকে তাড়িয়ে নিয়েছে,...এখন সবকিছু থেকে দূরে চলে এসেছি? কোনো তাড়া কোনো ব্যসত্মতা আর নেই। মনে হয় সব চাওয়া পাওয়ার বাইরে চলে এসেছি, আর এর জন্য দায়ী আমি নিজে। জেনেশুনে শূন্য এক উদ্যানে ভালোবাসার বীজকে বপন করেছি। তা থেকে অঙ্কুর বা কোনো চারা গজাবে না জেনেও আমি হাহাকার করছি কেন? আমার হৃদয়ের নিরব রক্তড়্গরণের সে শব্দটা ছাড়া আমি কোনোকিছু আর শুনছি না কেন? তা যে কত ভয়ঙ্কর তা বোঝাই কেমন করে? এর কাছে লড়্গ কোটি বিষাক্ত ভীমরম্নলের গুঞ্জন আর দংশনের যন্ত্রণা হার মানবে! সব জেনেশুনেই কি আমি আমার সবকিছুকে শেষ করলাম? এত যন্ত্রনার মাঝেও বুঝি না এখনও কেন তাকে নিয়ে অজানা এক সুখের ¯^cœ দেখি?
   বিজলীর হাহাকার বেশিড়্গণ স্থায়ী হয় না। শাহাজাদাকে নেমে আসতে দেখল, একা! শুধু একা নয়,বিজলীকে ঘিরে এতড়্গণ যে শূন্যতা ছিল,তা যেন এখন শাহাজাদাকে আষ্টে পিষ্টে বাঁধছে বলে বিজলী দেখল!
   তার সে দিপ্ত চেহারাটা এখন দেখছি না কেন? তার সে বলিষ্ট পদড়্গেপগুলো এখন এলোমেলো লাগছে কেন? যে শাহাজাদাকে আমি দেখেছি যাকে আমি চিনি সে কি হারিয়ে গেল? আমি এখন এক জীর্ণ শীর্ণ নেকড়েকে যেন দেখছি?...এ হতে পারে না। আমি সিংহকে দেখতে চাই, সিংহের গর্জন শুনতে চাই! আমি তাকে ¯^všÍbv দিব না,...তাকে খোঁচাব,...উত্ত্যক্ত করব, তাহলে তার ভিতরের সিংহটা গর্জন করবে।
   বিজলী গাড়ীর দরজা খুলে নেমে এক দৌড়ে গিয়ে শাহাজাদার একটা হাত ধরে রাসত্মার মাঝে তাকে দাঁড় করাল। 
   “এখন এত ভাবছো কেন? আমি তো আগেই বলেছিলাম আলেয়ার পিছে ছুটে লাভ নেই। এখন হল তো? যাক যা হবার হয়েছে, এখন আর ভেবে কি করবে? এ’কয়দিনে তোমার শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে,শুধু তোমার না আমারো। এসব দেখার তো কেউ নেই? সব  আমাকে দেখতে হবে। চল, এখন বাড়ীতে চল।
   বেশ কয়েকটা মুহূর্ত শাহাজাদা কিছু বলে না, বিজলীর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। বিজলী এবার তার ধরা হাতটায় একটা জোরে ঝাঁকি দিয়ে বলে,
   কি হল? চল, এভাবে রাসত্মায় তোমার হাত ধরে বেশিড়্গণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না, আমার লজ্জা করে।
   বিজলীর সবকিছুকে ন্যাকামী ছাড়া অন্য কিছু বলতে শাহাজাদা রাজী না। বিজলীর কথা শুনে.সে ক্ষুব্ধ হল, কড়া কিছু বলতে চাইল কিন্তু বলল না! বিজলী আবার তাড়া দেয়,‘ চল’। শাহাজাদা মাথা নাড়ে,
   তোমার সাথে আমি যাব না। আলেয়ারা এখান থেকে চলে গেছে, আমি তাকে খুঁজব। যেখানেই যাক না কেন আমি তাকে খুঁজে বের করব। বিজলী রেগে উঠে,
   কোথায় তাকে খুঁজবে? সে কোথায় গেছে তুমি তা জানো? কি তোমার সেই ছোট্ট গ্রাম, যে তাকে তুমি খুঁজে বের করবে?
   ছোট বড় যাই হোক আমি ভাবি না। সে যেখানে যতদূরে যাক না কেন আমি তাকে খুঁজে বের করব ঠিক। লেংটি ইদুরটা তাকে কোথায় লুকিয়ে রাখবে আমি তা দেখব?
   শুধু আলেয়ার বাবাকে দোষ দিচ্ছ কেন? আলেয়া রাজী না হলে সে কি তাকে কোথায়ও নিয়ে যেতে পারে?
   তুমি আলেয়াকে জান না, তাছাড়া তোমার মনে তাকে নিয়ে হিংসে, ইর্ষা রয়েছে যে জন্য তুমি আলেয়াকে এভাবে দেখছ। তুমি তোমার পথে চলে যাও আমাকে আমার কাজ করতে দাও।  আর বিরক্ত কর না।
   ঠিক বলেছ তুমি। আলেয়াকে আমি হিংসে করি; আর করব না কেন? আমার ভালোবাসার ধনকে নিয়ে যে এমন ছিনিমিনি খেলবে তাকে হিংসে করব না কেন? কিন্তু তাই বলে তাকে খুঁজতে তোমাকে বাধা দিব এটা ভেব না? আমি চাই তাকে খুঁজে পাও, তোমার মনের সব দ্বনদ্ব দূর হোক, সত্যটা তোমার সামনে প্রকাশ হোক। তখন তুমি আমার ভালোবাসাকে বুঝতে পারবে, এভাবে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে না।
   শাহাজাদার সবকিছু অসহ্য লাগছে, বিশেষ করে আলেয়াকে নিয়ে এভাবে বলাটা সে মেনে নিতে পারছে না। সে ভীষণ ড়্গিপ্ত হয়, বিজলী  এবার সিংহের গর্জনটা  শুনতে পায়।
   তুমি শুধু নষ্টা ভ্রষ্টা নও, তুমি একটা অসভ্য,অভদ্র। তাই ভদ্রজনকে নিয়ে এভাবে বলতে তোমার আঁটকাচ্ছে না। তোমার সাথে কথা বলতে আমার রম্নচিতে বাধছে, তবু বলছি আলেয়া কোনো ছিনিমিনি খেলেনি। তাকে নিয়ে এভাবে বল না, আমাকে নিয়ে মনে ¯^‡cœi জাল আর বুন না, শেষে তুমি `yt¯^cœ দেখবে।
   তুমি আমাকে অসভ্য অভদ্র বললে, আমার রম্নচিবোধ নিয়ে বললে? সমাজের উঁচুতলায় যারা বাস করেন তারা আমার গুণের কত কদর করে জানো? রম্নচির প্রশংসা করে জানো? সমাজে আমি একজন সফিষ্টিকেটেড লেডি বলে পরিচিত। শুধু তুমি আমার মূল্য বুঝলে না?
   নিকুচি করি তোমার উঁচু তলা আর তাদের রম্নচিবোধকে। তোমার মত একজনকে যারা এভাবে মূল্যায়ন করে তাদের সমন্ধে ভাবতেও আমার রম্নচিতে বাঁধছে। আসলে তারাও তোমার মতই নষ্ট, ভ্রষ্টা। তাই তোমাকে নিয়ে তাদের এত মাখামাখি।
   ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি হার মানছি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আলেয়াকে নিয়ে আমার এভাবে বলা ঠিক হয়নি। তবে এটা ঠিক জেনে রাখ তার প্রতি আমার হিংসে বা ইর্ষা যাই থাক, আমি চাই তাকে তুমি খুঁজে পাও। কেন? নিয়ে এখন আর বলব না। তুমি বাসায় চল, ঠিকভাবে সেরে উঠ, তারপর ধীরে সুস্থে তাকে খুঁজো। তুমি আমাকে যাই ভাবো আর যাই মনে কর,আমার কথাটা বিশ্বাস কর, এভাবে রাসত্মায় ঘুরে ঘুরে কিছু হবে না।
   বিজলীর কথায় যুক্তি আছে শাহাজাদা তা বুঝতে পারে। কিন্তু তাকে বিজলীর বাসায় তার আশ্রয়ে থাকতে হবে এটা সে মানতে পারে না।
   তোমার আশ্রয়ে তোমার অনুগ্রহে আমি থাকব কেন? বিজলীর মুখটা এবার দুঃখ বেদনায় ভারাক্রানত্ম হয়ে উঠে।
   তোমাকে আশ্রয় দিচ্ছি অনুগ্রহ করছি এভাবে বলছ কেন? তুমি মান আর না মান,আমি তোমাকে ভালোবাসি এজন্য নিশ্চয় এটুকু করতে পারি? ভালোবাসার জন্য আমি সব করতে পারি। অনুগ্রহ বা আশ্রয় কোনোটা নেয়ার প্রয়োজন তোমার হবে না। তুমি কাজ করে উপার্জন করেই থাকবে,খাবে। এতে তোমার আপত্তি নেই তো? বিজলী কি বলল শাহাজাদা তা ঠিক বুঝতে পারে না,
   আমি কাজ করবো, উপার্জন করব? কি ভাবে?      
   আমার বাসায় সালমা নামে যে মেয়েটা আছে তাকে তুমি পড়াবে। গ্রামের স্কুলে সপ্তম শ্রেণী পর্যনত্ম পড়েছে, আরো পড়তে চায়। আমি ওকে স্কুলে পাঠাতে চাই কিন্তু স্কুলে যেতে রাজী না। সালমাকে পড়ানোর দায়িত্বটা যদি নাও তা হলে আমি নিশ্চিত হই। গৃহশিড়্গক রাখা বা গৃহশিড়্গক হয়ে থাকার মধ্যে তো কোনো দোষ নেই, কি বল?            
   শাহাজাদা বুঝতে পারে না বিজলীর প্রসত্মাবে কি বলবে। সে চুপ করে থাকে। বিজলী তাড়া দেয়,
   কি হল কিছু বলছ না কেন? আমি কি অন্যায় কিছু বলেছি? ঠিক আছে কিছু বলতে হবে না এখন, বাসায় চল। শাহাজাদা দ্বিধাগ্রসত্ম-- 
    শিড়্গকতা পেশাটা সন্মানের কোনো সন্দেহ নেই,তবে কারো বাড়ীতে গৃহশিড়্গক হয়ে থাকাটা বিশেষ করে আমার মত একজন সম্ভ্রানত্ম বংশীয়ের জন্য খুব সম্মানের কাজ হবে বলে মনে হয় না? তাও আবার তোমার মত কারো বাড়ীতে? তাছাড়া আমার মনে হয় কাজের তুলনায় প্রাপ্তিটাও বেশি হবে? তোমার কাছে আরো বেশি ঋনী হয়ে যাব?
   আহা ঋন নিয়ে এত ভাবছ কেন? তোমাকে তো আগেই বলেছি আমার যা পাওনা তা আমি কড়ায় গণ্ডায় আদায় করব। তুমি যাই ভাবো আর বল, সারাটা জীবন তোমার কাছে ঋন আদায়ের সুযোগ আমার থাকবে। নিয়ে এখন আর ভেব না,এখন আলেয়াকে নিয়ে ভাব। চল, চল আর দেরি নয়।
    শাহাজাদাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না বিজলী। একটা হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে গাড়ীতে বসে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites