চার
“ না, আমি ভিন্নটা মনে করি। ” শাহাজাদার কন্ঠে আত্মবিশ্বাস আর প্রত্যয় বড় স্পষ্ট!
“ আমি মনে করি সবাই আমরা জুয়া খেলি আর তা প্রতিমুহূর্তে খেলি। জুয়া মানে যদি অজানা কোনোকিছুকে পাওয়ার জন্য ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করে বাজি ধরা,তা হলে আমরা সবাই কোনো না কোনো ভাবে জুয়া খেলি। এ মুহূর্তে আমরা দু’জনেই জুয়া খেলছি।
”
”
“ এ মুহূর্তে আমরা দু’জনে জুয়া খেলছি! আমিও জুয়া খেলছি? ”
“ হ্যাঁ তাই। আমারটা বলছি, তার সাথে তোমারটা মিলাও। তা হলে বুঝতে পারবে আমি কি বলছি। ” শাহাজাদা একটু থামে, আলেয়ার মুখের দিকে এমন করে তাকায় যেন তার সম্মত্তি চাচ্ছে। আলেয়া নিরব থেকে যেন তার সম্মতি দিল।
“ আমাদের সাড়্গাতের সময় থেকে এ খেলাটা শুরম্ন হয়েছে। তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে তোমাকে নিয়ে আমি অনেক কিছু ভাবছি। তোমার কি শুনতে খারাপ লাগছে, মনে হয় না? মেয়েদের রূপের প্রশংসা করলে তারা খুশি হয়, তবে লজ্জা পাওয়ার ভান করে। এভাবে বলছি বলে আবার মনে কর না মেয়েদের আমি হেয় করছি। মনে হয় সত্যটা আমি বলছি। লুকোচুরি আমি পছন্দ করি না। মেয়েরা ভান করে--ভান করতে তারা জানে! পুরম্নষরাও ভান করে তবে মেয়েদের মত এতটা নিখুঁত ভাবে করতে পারে না। এবার খেলার কথায় আসি।... তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার মন জয় করার জন্য আমি উতলা হয়ে পড়েছি। আশা করি এজন্য আমাকে হ্যংালা কিছু বলে তুমি মনে করবে না? যদিও পুরম্নষদের হ্যংলা বলে মেয়েরা আনন্দ পায় কিন্তু হ্যাংলা কাউকে পছন্দ করে না। এটা মানতে হয় হ্যাংলামো গুনটা পুরম্নষদের আছে,তবে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। তুমি আবার ভেব না কবীর তোমাকে যা বলেছে আমি তাই মিন করছি? আসলে তুমি খুব সুন্দরী, তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে আমি তোমাকে জয় করার চেষ্টা করছি।
” “ আপনি আমাকে জয় করার চেষ্টা করছেন নাকি জয় করে ফেলেছেন? ”
“ বলতে পার দু’টোই। বলা হয় মেয়েদের মনের খোঁজ পাওয়া খুব কঠিন। এজন্য নাকি নিরনত্মর সাধনা চালিয়ে যেতে হয়। তবু ¯^xKvi করতে হয় মেয়েরা মনটা দেয়--একটু একটু করে-- খুব অসুস্থ দূর্বল রোগীকে যেমন অল্প অল্প খাবার দিতে হয়, মেয়েরাও তাই করে। যাই বল,বাসত্মবে অসুস্থ দূর্বল রোগীদের চেয়ে পুরম্নষদের অবস্থা কোনোসময় ভালো না! আমি কি ভুল বলছি?”
আলেয়া উল্টো প্রশ্ন করে,
“ এ মুহূর্তে আপনার নিজের অবস্থাটা কি? ”
“ খুব বুদ্ধিমানের মত প্রশ্নটা করেছ। এর সঠিক উত্তরটা এ মুহূর্তে দিতে পারছি না,পারছি না কারণ এ মুহূর্তে একটা ভয়ানক কঠিন খেলা আমি খেলছি। খেলায় উত্তেজনা আর শিহরণটা শুধু বুঝতে পারছি,অন্য কিছু না। তুমি আবার ভেব না আমি ভান করছি? যদিও অন্য সবার মত আমিও ভান করি, ভান করতে হয়। প্রয়োজন হলে তোমার সাথেও করব, তবে এখন করছি না। হ্যাঁ যা বলছিলাম, মেয়েরা মন দেয়,মনের জানালাগুলো খুলে দেয়--একটু একটু করে। মূল দরজাটা তারা খুলতে চায় না। খুললেও তা অনেক দেরীতে, বেশির ভাগ ড়্গেত্রে এটা বন্ধই থাকে।...সামান্য ফাঁকটুকু দিয়ে যে আলো আসে তাতেই পুরম্নষরা দিশেহারা হয় আত্মহারা হয়! মেয়েরা জানালাগুলো আবার সবসময় খোলা রাখে না, সুযোগ বুঝেই বন্ধ করে দেয়। পুরম্নষরা ছটফট করে আর্তনাদ করে, মেয়েরা আবার...বুঝতেই পারছ...? ” শাহাজাদা থামে, আলেয়ার মুখের দিকে তাকায়। আলেয়া কিছু বলে না সে যেন কিছু জানে না। বোবা ভাবলেশহীন দৃষ্টি এখন তার!...এমন দৃষ্টি দেখে শাহাজাদা কি বুঝল তা বলে না, তবে সে থামে না।
” তোমাকে জয় করার জন্য,তোমার মনটা জয় করার জন্য আমি বাজি ধরেছি।...একা শুধু মুগ্ধ হয়েছি তা নয়, তুমিও আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছো? হয়ত আমাকে ভালোবাসতে শুরম্ন করেছ? তবে তা বলতে পারছ না। তুমি এখানে থাক না, নিজের সম্পর্কে আমি মিথ্যে বলে অথবা কিছুই না বলে তোমার মনটা আমি সহজেই জয় করতে পারতাম। এদেশে এ সমাজে অহরহ এসব হয়ে থাকে। মেয়েরা এটা করে না তা নয়, তবে মানছি পুরম্নষরাই এড়্গেত্রে এগিয়ে আছে। মিথ্যে কথার ফুলঝরি ঝড়িয়ে একটা মেয়ের মন জয় করা আমার পড়্গে এমন কঠিন কোনো কাজ বলে আমি মনে করি না। তুমিও হয়ত তা মানবে কিন্তু আমি তা করলাম না। কারণ আমি কোনো লুকোচুরি পছন্দ করি না। এটাকে তুমি আমার বংশ মর্যাদার গৌরব বা অহংকার বলে মনে করতে পার,আমাকে ব্যঙ্গ করতে পার,একটু আগে যেমন জুয়া খেলা নিয়ে করলে। আমি মনে কিছু করব না,...করব না কারণ তোমাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না। আমার এ মুগ্ধতার সরলতা আমাকে মিথ্যে বলতে বারণ করছে। এমন মুগ্ধতায় শঠতা বা ছলনার কোনো স্থান নেই বলে আমার মন বলছে। তাই বলে বর্ণে বর্ণে আমি এক সত্যবাদী বলে নিজেকে দাবী করছি না, তোমাকেও তা ভাবতে বলছি না। এখন নিজের ভিতর থেকে একটা অনুভূতি আমাকে তাড়া করছে সত্যটা বলতে। সত্যটা বললে তুমি আমাকে প্রত্যাখান করতে পার কিন্তু অনুভূতিটা বলছে,সত্য যা তাই দিয়ে বাজিটা ধরতে। আমরা সত্যটা বলি না, বলতে ভয় পাই। আবার অনেক মিথ্যাবাদী তার আসল রূপটা ঢাকার জন্য সত্য বলার ভান করে। তুমি আমাকে এমন একজন বলে ভাবতে পার,এ অধিকার বা ¯^vaxbZv যাই বল তা তোমার আছে। কিন্তু এ মুহূর্তে যা সত্য তাই বলে বাজিটা আমি ধরছি। তোমাকে কোন জোর করছি না। ”
“ কিন্তু আমি বাজি ধরছি বা জুয়া খেলছি কিভাবে? ”
“ তোমার বাজি ধরাটা একটু ভিন্ন ধরণের। সব মেয়েরা এটা করে। মেয়েরা পুরম্নষদের সব কিছুকে ভালোবাসে, এমন কি তার পড়নের ছেড়া নেকরাটকে পর্যনত্ম। সবটা যে ভালোবাসা এমনটা নয়। একটা পুরম্নষের যা কিছু আছে সব তার প্রয়োজন। আর এ প্রয়োজনটাকে নিয়ে সে সবসময় ভাবে, নিজেকে ব্যসত্ম রাখে। পুরম্নষের যে কিছু প্রয়োজন থাকতে পারে তা সে ভুলে যায়। এমন কি পুরম্নষটাকেও ভুলে যায়। আর এটা শুরম্ন হয় নারী পুরম্নষের প্রথম পরিচয় থেকে। প্রথম পরিচয় থেকে মেয়েটা ভাবতে থাকে,একেই খুঁজছিলাম যে শুধু আমাকে ভালোবাসবে তা নয় তার সবকিছু আমাকে দিয়ে দিবে। কিন্তু সন্দেহটা তার থেকে যায়, সেকি সবদিক থেকে আমার হবে? একানত্ম আমার...? এ সন্দেহটা নিয়েই তার যাত্রা শুরম্ন। পুরম্নষদের ব্যপারটা কিন্তু ভিন্ন। আগুন দেখে কোনোকিছু না ভেবে পতঙ্গ যেমন লাফ দেয় পুরম্নষদের বেলায়ও তাই হয়। পুরম্নষরা কোনোকিছু না ভেবেই একটা মেয়েকে ভালোবাসে। এ মুহূর্তে যেমন তোমাতে মুগ্ধ হয়ে আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তুমি আমাকে দেখে শুধু মুগ্ধ হয়েছ তা নয়, হয়ত আমার সবকিছু নিয়ে ভাবতে শুরম্ন করেছ? এখান থেকে তোমার বাজি ধরাটা শুরম্ন হয়েছে। পুরম্নষরা দেয়, বেশিরভাগ ড়্গেত্রে সবকিছু তারা উজার করে দিয়ে দেয়। কিন্তু মেয়েরা তৃপ্ত হয় না, সে আরো চায়, কি চায় তা অনেক ড়্গেত্রে সে জানে না? পুরম্নষের সবকিছু নিয়েও এমন কি তার পড়নের ছেড়া নেকড়া থাকলে তা খুলে নিয়েও সে শানত্ম হয় না, যতড়্গণ পর্যনত্ম না পুরম্নষটা তার গোলামী ¯^xKvi করে। আর এ নেয়াটা শুরম্ন হয় পরিচয়ের মুহূর্ত থেকে বাজি ধরে ধরে। ”
মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা সে অতিক্রম করতে পারে না। সে মুহূর্ত বা মুহূর্তগুলো তার সামনে একটা বাধা,একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এমনটা আলেয়ার জীবনে আজ ঘটল। শাহাজাদার সাথে পরিচয়ের আগে নিজেকে জানত একরম্নপে। গ্রামের পরিবেশ পরিচিত তার ভালো লাগলেও এসব সম্পর্কে কিছুটা হলেও তার মনে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব আছে। গ্রামের সুন্দর এক সুপুরম্নষ যুবুককে দেখে সে মুগ্ধ হয়, বিমোহিত হয় কিন্তু তার সাথে নিজের পার্থক্যটা সম্পর্কে সচেতেন ছিল। কিন্তু এই অজানা যুবকের মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো যেন তাকে একটা জালে জড়িয়ে ফেলছে? জালটা থেকে সে বের হতে চেষ্টা করে কিন্তু শাহজাদার মুখ হতে উচ্চারিত প্রতিটা শব্দ এক একটা গিট হয়ে তাকে আরো শক্ত বাঁধনে বাঁধছিলো!
“ আমার পরিচিত পরিবেশে অনেককে দেখেছি তাদের সাথে আলাপ পরিচয় মেলামেশা আছে কিন্তু এমনটা আমার কোনোদিন হয়নি কেন? তাদের মত শিড়্গা দিড়্গা আচার ব্যবহার কোনোটাই হয়ত এর নেই কিন্তু এর যা আছে আমার মনে হয় তা কারো নেই--কারো হবে না। নিজের দোষ অনেকে ¯^xKvi করে সত্য,কিন্তু এমন অকপট সরল ¯^xKv‡ivw³ এ জগতে কে করতে পারে? আমি এখন কি করব?...সে যা বলছে লোকে তা মানবে কিনা জানি না কিন্তু তাকে A¯^xKvi করার সাধ্য যে আমার নেই? আমার সাথে তাল মেলানোর মত সামর্থ্য হয়ত তার নেই,হয়ত তার কোনো বিত্ত নেই। নিজ মুখে বলেছে সে এক জুয়াড়ি!...তবু তাকে ভালোবেসে তার সাথে জড়িয়ে যাবো?...তার সাথে আমার এ জীবনটা পাড়ি দিব? এ এক ভয়ঙ্কর ভাবনা! কিন্তু তাকে A¯^xKvi করে তার থেকে দূরে সরে যাব, এমনটা তো ভাবতে পারছি না? জুয়া খেলা নিয়ে সে যা বলেছে এ জগতে কেউ তা না মানলেও আমি মানব; সবাই তাকে ঘৃনা করলেও তাকে আমি ভালোবাসব। ‘ অন্য কাউকে হয়ত বিশ্বাস করা যায় কিন্তু একটা জুয়াড়িকে না ’ এ কথাটা অনেকে বলে, আমি তা নিয়ে ভাবিনি। আজ ভাবছি এ জগতে কাউকে বিশ্বাস করা না গেলেও আমার সামনে যে জুয়াড়ি দাঁড়িয়ে তাকে বিশ্বাস করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। আমি তাকে জুয়া খেলতে নিষেধ করব না, কারণ তাকে আমি ভালোবাসি; আর সে যা ভালোবাসে তাকে A¯^xKvi করতে বা ঘৃনা করতে পারি না। তবু তার কাছে চাইব আমার ভালোবাসার মূল্য, যা কি আমি তা ঠিক জানি না? তার সাথে জীবনটাকে জড়িয়ে চলতে চলতে মুখে না বলেও একদিন হয়ত সে চাওয়াটা চাইব। তা পাব কি না,জানি না?...তা না পেলেও দুঃখ করব না, কারণ ভালোবাসায় কোনো দুঃখ থাকে না, দুঃখ পেতে নেই। আমি এখন তাকে কি বলব?”
তারা দু’জনে একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইল। একসময় শাহাজাদা বলল,
“ আমি আমার কথা বলেছি,তুমি কিন্তু এখনো কিছু বল নি?”
“ আমি কি বলব? সে নিজে বলেছে তাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। সে আমার মুগ্ধতা দেখেছে, মুগ্ধতায় যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় তা কি সে দেখেনি? আমি কিছু বলব না, সে তার ভালোবাসায় জেনে নিক আমার ভালোবাসা। তবু আমি বলব, বলব যা তা শুনে সে হয়ত ক্ষুব্ধ হবে? হোক, তার ড়্গোভ বিড়্গোভ, রাগ অনুরাগ সবকিছু আমাতে আমি জড়িয়ে নিব। তার সবকিছু আমাকে জড়িয়ে থাকবে। সে যেমন বলেছে মেয়েরা পুরম্নষের সবকিছু চায়। কে কি চায় জানি না কিন্তু আমি তার সব কিছু চাই। ” এমন সব ভাবনার মাঝে শাহাজাদার মুখে কিছু যেন খুঁজছে এমন ভাব নিয়ে আলেয়া হঠাত বলে উঠে,
“একটা চাকরির চেষ্টা করছেন না কেন? ” শাহাজাদা হাসে। একটা হাত আলেয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“ চাকরির চেষ্টা করলে হয়ত পেয়ে যাব। কিন্তু তোমার মনটা...? ” শাহাজাদা শেষ করে না। আলেয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আলেয়া জানে না কখন নিজের হাতটা সে শাহাজাদার বাড়ানো হাতটায় রেখেছে!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন