তিন
আলেয়ার সাথে তার বিয়ের প্রসত্মাবটা এত সহজে সবাই মেনে নিবে শাহাজাদা এমনটা ভাবেনি। তবু খুব বেশি অবাক হয় না সে। নিজেকে জিজ্ঞেস করে,
“ অর্থ সম্পদ আজ যেন সবকিছুর নিয়ামক হয়ে উঠেছে? কিন্তু এসবেই কি সবকিছু? ” ‘ হয়ত সব কিছু!’ কিন্তু তার নিজের ভিতর থেকে কেউ যেন তাকে বলে, “ না, এসব কিছু না। তোমার যা আছে তার কোনো পরিমাপ নেই,অর্থ সম্পদ দিয়ে একে মাপা যায় না। এর কোনো বিনিময়ও সম্ভব না। এর বিনিময় তুমি তার সাথে কর যে তোমার যোগ্য। ” শাহাজাদা বিভ্রানত্ম হয়, “ কিন্তু আমি তাকে পাব কোথায়? আলেয়াকে আমি ভালোবাসি, তার কি হবে? ”
একমাস আগে আলেয়ার সাথে শাহাজাদার পরিচয়। ওদের বাড়ী থেকে দুই মাইল পশ্চিমে কবীরের সাথে কইপাড়া গ্রামে গিয়েছিল শাহেদ নামের এক জুয়াড়ির কাছে। শাহেদ’র বাড়ী ওরা চিনত না। তখন সকাল এগারোটা,লোককে জিজ্ঞেস করে করে একটা বাড়ীর সামনে গিয়ে দুই বন্ধু দাঁড়ায়।
“ এটা শাহেদ’র বাড়ী? ” কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শাহাজাদা কবীরকে জিজ্ঞেস করে। কবীরও দ্বিধাগ্রসত্ম,
“ আমার মনে হয় না এটা শাহেদ’র বাড়ী। হলেও ওর একার নয়, হয়ত আরো ভাগীরা রয়েছে। কিন্তু কাউকে তো দেখছি না? ”
“ কার হয় হোক। বাড়ীতে কেউ নেই বলে মনে হয়। ডাক দেখি, কেউ আসলে জানা যাবে এটা কার বাড়ী। ” কবীর অমত করে না, সে শাহেদের নাম ধরে ডাক দেয়।
ওদের ডাক শুনে কুড়ি একুশ বছরের একটি মেয়ে বের হয়ে এল।
‘কাকে চান?’ মেয়েটা প্রশ্ন করে।
প্রথম দর্শনে মেয়েটাকে খুব সুন্দরী আর র্স্মাট বলে শাহাজাদা মেনে নিল। ঘোর gd¯^‡j এমন সুন্দরী স্মার্ট একটা মেয়েকে দেখে শাহাজাদা অবাক হয়! বেশ কয়েকটা মুহূর্ত হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করে ‘কাকে চান?’ শাহাজাদা কিছু বলার আগে কবীর বলে, ‘শাহেদ বাড়ীতে নেই?’
প্রায় নিজের বয়সী একটা ছেলেকে তার মামার নাম ধরে এমন করে ডাকতে শুনে মেয়েটা ড়্গেপে যায়। রাগত ¯^‡i বলে,
“ আমার মামার সাথে তোমার কি দরকার?”
“ মামা! শাহেদ তোমার মানে আপনার মামা? ” শাহাজাদা হা করে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে! শাহাজাদার কথায় মেয়েটা আরো ড়্গেপে যায়।
“ হ্যাঁ শাহেদ পাঠান আমার মামা। তার সাথে তোমার কি দরকার? ”
এভাবে শাহাজাদার সাথে কথা বলায় কবীর রেগে উঠে।
“ শাহেদ তোমার মামা না বাবা এনিয়ে আমাদের ভাবনার কিছু নেই। কিন্তু তুমি আমাদের সাথে,বিশেষ করে ওর সাথে এমন করে কথা বলছো কেন? ও কে, তুমি জান? ও হচ্ছে এ অঞ্চলের বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারের ছেলে, তার সাথে তুমি এভাবে কথা বলছো? ”
অল্পবয়সী একটা ছেলে তার মামাকে নাম ধরে ডাকায় আলেয়া ড়্গেপে গিয়েছিল। এতড়্গণ সে কারো দিকে ভালো করে তাকায়নি। এবার সে শাহাজাদার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।
“ আমি কোন রাজপুত্তরকে দেখছি?”
শাহাজাদা দেখতে সুন্দর সুপুরম্নষ। উঠতি বয়সের কলেজে পড়ুয়া কোনো মেয়ে তাকে সামনাসামনি দেখে ভীমরি খাবে এটা ¯^vfvweK| আলেয়া শাহাজাদাকে দেখে! বারবার,লুকিয়ে নয় সরাসরি! লজ্জা সংকোচ যেন ওর কিছু নেই, মনে হয় এসব কোনোদিন ছিল না ওর? যত দেখে তত মুগ্ধ হয়, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়। শাহাজাদাও আলেয়াকে দেখছে।
“ মেয়েটা সুন্দরী, তার চেয়ে বেশি স্মার্ট, গ্রামে এমনটা দেখা যায় না। এ’ কে?”
ওদের দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে কবীর সব বুঝতে পারে।
“ মনে হয় এরা দু’জনেই দেওয়ানা হয়েছে? ভালোই হল, পাত্রী খুঁজতে হবে না আর। কিন্তু এত সহজেই বা কেন? মেয়েটার তো দেখছি ভীষণ তেজ? তোমাকে সহজে ছাড়ছি না চাঁদ,...যার উপর থেকে নজর ফেরাতে পারছো না সে আমার বন্ধু। ”
শাহাজাদার একটা হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বলে,
“ এ’য় তোর হল কি? এর মাঝে এমন কি আছে যে ডেব ডেব করে দেখতে হবে একে? ” কবীর শুধু শাহাজাদাকে বলল না, আলেয়াকেও ধমক দেয়।
“ আর তোমাকে বলছি,সুন্দর ছেলে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পার না? এমন হা করে তাকাচ্ছো কেন? আমি আগেই বলে রাখছি, আমার বন্ধু এত সসত্মা না। ওর জন্য কিন্তু তোমাকে অনেক মূল্য দিতে হবে। ”
শাহাজাদা বিব্রত হয়,বিরক্ত হয়। মেয়েটা সুন্দরী,স্মার্ট। শাহাজাদার খুব ভালো লেগেছে। “ এ গাধাটা দেখছি সব গুবলেট করে দিল?”
কবীরকে একটা ধমক দিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু মেয়েটার কথা শুনে এবার উল্টো ওর নিজের ভীমরি খাবার দশা!
“ কি মূল্য চাও? আর বিনিময়ে কি মূল্য দিতে পার?”
খুব সংড়্গিপ্ত দু’টো প্রশ্ন, কিন্তু শাহাজাদার কাছে তা যেন কোনো সাধারণ প্রশ্ন নয়? আলেয়ার রক্তিম চিকন দু’টি ঠোঁটে কোনো শিল্পির বাজানো মন মাতানো সুরলহরী যেন বাঁজছে? ঠোঁটের উপর নাক দু’টোয় বয়ে যাওয়া মৃদু শ্বাসের শব্দ শাহাজাদার কানে আসছে।...নাকের দুই পাশে ডাগর চোখ দু’টোয় অজানা কোন রাজ্যের জিজ্ঞাসা নিয়ে ¯^‡cœi মায়াজাল যেন বুনে চলেছে। কোনো শিল্পির হাতে আঁকা ভুু’দুটোর উপর কানের পাশে কয়েকগাছি চুল অবিরত কাকে যেন আহ্বান করছে? শাহাজাদা জেনেছে কাকে সে ডাকছে?
“ সে কাকে ডাকছে আমি জানি? সে অন্য কেউ না; তার সামনে দাড়িয়ে বিখ্যাত সৈয়দদের উত্তর সুরী আমি ছাড়া এ অন্য কেউ না, হতে পারে না।
-- কিন্তু আমার কেন এমন মনে হচ্ছে? ” শাহাজাদা নিজেকে প্রশ্ন করে।
জুয়া খেলাতে শাহাজাদা শিহরণ অনুভব করে, কিন্তু আজ এ মুহূর্তে এর চেয়ে আরো ভয়ানক কিছু তার শরীরটাকে যেন নাড়া দিচ্ছে! “ আমি কি এখন জুয়া খেলছি?...মনে হয় তার চেয়েও বেশি কিছু আমাকে নাড়া দিচ্ছে। জুয়া খেলায় প্রতিবার যেমন অজানা একটা কিছু আমাকে ডাক দেয়, এ অঁেচনা মেয়েটা ঠিক তেমনি যেন ডাকছে।... প্রশ্ন করছে আমি কি চাই? আমি কি চাই তা যেমন আমি জানি সেও জানে। সে বলছে বিনিময়ে কি মূল্য দিতে পারি? মুখে কিছু না বলেও বলছি, ‘ আমার যা কিছু আছে সব।’ আমার জীবনটা নির্দ্ধিধায় তাকে দিয়ে দিতে পারি। সে সুন্দরী আর স্মার্ট; শুধু এটুকু নয়; আমি অনুভব করছি তার মাঝে আরো কিছু আছে, যা কারো মাঝে আমি দেখিনি। এমুহূর্তে আমি যেন এক নাট্যমঞ্চে! আর এ মঞ্চটা সাজানো হয়েছে জগতের যত সুন্দর ফুল দিয়ে। নাম না জানা সব ফুলের রং বর্ণ আর সৌরভের ছটায় অপরূপ মঞ্চে শুধু সে আর আমি! আমরা দু’জনে নিরবে এক নাটকে অভিনয় করছি। গোটা জগত আমাদের দেখছে, দেখছে না শুধু নানা গুঞ্জনে সবকিছু মুখরিত করছে! ‘এমন জুটি আর হয় না’ বলে মনত্মব্য করছে। আমার অবাক লাগছে কেউ আমাদের কোনো নিন্দে করছে না! এমনটাতো হয় না? আমাদের দেখে নিন্দুকরা কি নিন্দে করতে ভুলে গেল? আহা এমনটা হলে কত না ভালো হত? কিনত্মু এজগতে নিন্দে আর অপবাদ না কুড়ালে প্রেম ভালোবাসা তো সার্থক হয় না। সার্থক হলেও তাতে কোনো আনন্দ থাকে না। কিন্তু ওর আর আমার মাঝে ড়্গণিকের নিরবতায় যে প্রেমের জোয়ার বইছে, যা জগত দেখছে, (যদিও আমরা দু’জনে কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা এখনো বলিনি) তা সব কিছুকে যেন জয় করেছে! ”
একসময় নিরবতার শেষ হল। শাহাজাদা কবীরকে ডাকল। কবীর নেই, ওদের অবস্থা দেখে কবীর নিরবে ওখান থেকে সরে গেছে। ‘কবীরটা গেল কোথায়?’ বলে শাহাজাদা এদিক ওদিক তাকায়।
আলেয়া জিজ্ঞেস করে “ কবীর কে, আপনার কি হয়?”
“ কবীর আমার বন্ধু। ” আলেয়া অবাক হয়ে শাহাজাদার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। শাহাজাদা বুঝতে পারে না সে হাসছে কেন? “ তুমি হাসছো কেন? ”
“ হাসছি আপনার বন্ধুকে দেখে। ”
বন্ধুকে নিয়ে অজানা মেয়েটার মুখে হাসি দেখে শাহাজাদা বিভ্রানত্ম হয়!
“ কবীর আমার বন্ধু, ছোট বেলা থেকে একসাথে আমরা বড় হয়েছি। আমাদের মেলামেশাটা অনেকে বিশেষ করে আমার ভাবীরা পছন্দ করে না। এ মেয়েটাও কি তেমনটাই করছে? মনে হয় সব মেয়েদের একই সমস্যা। ব্যতিক্রম শুধু আমার মা। তিনি তো সত্যিকারের এক সম্ভ্রানত্ম পরিবার থেকে এসেছেন। ভাবীরা তা নয়। এ মেয়েটা কি ভাবীদের মত তেমন কেউ? ”
আলেয়াকে নিয়ে খারাপ ভাবনাটা শাহাজাদা ভাবতে রাজী না। নিজের উপর সে বিরক্ত হল।
“ তার সম্পর্কে এসব ভাবছি কেন? সে সুন্দরী!...কমনীয়তা নমনীয়তায় শুধু আমাকে নয় আশপাশের সবকিছুকে যেন মুগ্ধ করেছে? আমি যা ভাবছি সে এমনটা হতে পারে না। ” একটা অপরাধ হয়েছে এমন ভাব নিয়ে শাহাজাদা তাড়াতাড়ি বলে “ ওর কথায় কিছু মনে কর না। আমার বন্ধু বলে বলছি না ওর মনটা খুব ভালো। ওর সাথে মিশলে তোমার খুব ভালো লাগবে। ”
আলেয়ার মুখে হাসি। তবু অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“ আমি কেন ওর সাথে মিশবো? ওর সাথে আমাকে মিশতে হবে কেন? ” শাহাজাদা সহসা আলেয়ার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। সে আমতা আমতা করে,
“ মিশতে বলছি মানে সে আমার...” আলেয়ার হাসি বন্ধ হয় না।
“ আপনার বন্ধু? বুঝলাম, কিন্তু আমাকে কেন তার সাথে মিশতে হবে? ”
আলেয়া এভাবে বলায় শাহাজাদা বিব্রত হয় কিন্তু তা স্থায়ী হয় না।
“ তার কথা শুনে মনে হতে পারে সে মুখরা? কিন্তু আমার মন বলছে সে মুখরা bq,...¯^ZùyZ©,¯^cÖwZf,my›`ix| তার মাঝে প্রেম ভালোবাসার এক অনাবিল সরোবর যেন বইছে? আমাকে উপহাস করছে তা নয়,তার প্রেম ভালোবাসাকে সে প্রকাশ করছে। তার প্রকাশের ভঙ্গিটা আমার ভালো লাগছে। তার সবকিছুই আমার ভালো লাগছে, তা আমি বলতে পারি। আমি বিব্রত বোধ করছি কিন্তু মুগ্ধ হচ্ছি বেশি! কিন্তু এসব আমার মনে হচ্ছে কেন? সে বলেনি ‘ আমাকে সে ভালোবসে? ’ তবু আমি ভাবছি তা সত্য? মনে হয় আমার ভুল হয়নি, তার চোখে আমি এক অপরূপ মুগ্ধতা দেখছি! একে অপরকে দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি! এ মুগ্ধতার মাঝে সহসাই প্রেম ভালোবাসার ¯^wcœj এক চাদর জন্ম নিয়ে আমাদের দু’জনকে যেন জড়িয়ে ধরছে! আমাদের মাঝে আর কোনোকিছু যেন নেই, নেই কোনো শূন্যতা!...সে আর আমি! এ চাদরটার বুনুনি গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, এটা ছড়িয়ে পড়ছে সীমাহীন ভাবে! আমরা দু’জনেই ঐ মায়াময় চাদরটার আবরণে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলছি। এ জগত সংসার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা দু’জনে ভিন্ন এক জগতকে গড়ছি! আমরা দু’জনে শুধু এ জগতের বাসিন্দা। ”
“ আপনাকে এভাবে বললাম বলে আপনি কি কিছু মনে করলেন? ”
আলেয়ার এ প্রশ্নে শাহাজাদা mw¤^Z ফিরে পায়। তাড়াতাড়ি বলে,
“ তোমার কথায় আমি কিছু মনে করিনি। মনে হয় কোনোদিন কিছু মনে করব না। ” শাহাজাদার কথা শুনে আলেয়ার চোখদু’টো যেন উল্টে বের হয়ে আসে, হা করে শাহাজাদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। শাহাজাদা অবাক হয়,
“ এরকম করছো কেন! কি দেখছো এমন করে? ”
“ আপনি কি সরল না বোকা তাই দেখছি? আপনার সাথে এখনও আমার কথা হল না, এখনও কিছু বলিনি,... কোনোদিন কথা হবে বা বলতে পারব কি না তার কোনো ঠিক নেই? এদিকে আপনি প্রতিজ্ঞা করে বসলেন আমার কথায় কোনোদিন কিছু মনে করবেন না? ”
শাহাজাদা হেসে বলে,
“ আমি সরল বোকা কিছু না। কিন্তু তুমি খুব ভালো মনের মানুষ, এটা আমি বলতে পারি। ”
“ আমার মনের খোঁজ আপনি এর মধ্যে পেয়ে গেছেন? ” আলেয়া আবার অবাক হয়ে শাহাজাদার মুখের দিকে তাকায়।
আলেয়া তাকে খোঁচাচ্ছে,শাহাজাদা তা বুঝতে পারে। এটা যেন অবিরত। এমন খোঁচানোতে শাহজাদা বিরক্ত হয়, তবে তা মুহূর্তের জন্য। “ আমি কি বারবার হেরে যাচ্ছি? কিন্তু এ হারে আমার খারাপ লাগছে না! হেরে গিয়েও আনন্দ পাওয়া যায় এ আমার জানা ছিল না? জুয়া খেলায় হেরে গিয়ে গোটা জগতটাকে তিক্ত বলে মনে হয়। কিন্তু কি আশ্চর্য! এর কাছে বারবার হেরে গিয়েও আজ আমার ভালো লাগছে? হারছি যত আনন্দ পাচ্ছি তত বেশি, মনে হয় হার নয়,এ জিত। বড় একটা দান যেন আমি জিতব, এর মনটা জয় করেই জীবনের সবচেয়ে বড় দানটা জিতব বলে মনে হয়। শরীরটায় একটা অজনা শিহরণ বইছে, আমি ভীষণ নেশাতুর হয়ে পড়ছি! জুয়ার নেশা যেমন ডাক দেয় কাছে টানে, এ মেয়েটা তার চেয়ে লড়্গ কোটি গুন বেশি আমাকে টানছে। মনে হয় আমি জিতেছি, তার মনটাকে জিতেছি, তার সবকিছুকে জিতেছি? ”
“ আমার নাম আলেয়া। ঢ়াকায় ইডেন কলেজে বাংলায় দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সে পড়ি। মামার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছি। ”
“ আমি শাহা...” আলেয়া বাধা দেয়,
“ শুনেছি। আরো শুনেছি এ অঞ্চলের বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারের আপনি একজন। মামাদের মুখে আপনাদের কথা অনেক শুনেছি। আজ তাদের একজনকে চাক্ষুস দেখার সৈভাগ্য হল! তা আপনি কি করেন? গ্রামের বাড়ীতে থাকেন,নাকি বেড়াতে এসেছেন? ”
“ তুমি আমার সম্পর্কে এতকিছু জান? ” কন্ঠে কিছুটা খুশি, কিছুটা অবাক হওয়ার ভাব নিয়ে সে আলেয়াকে জিজ্ঞেস করে।
“ এতকিছু জানলাম কই? এখনও তো জানলাম না আপনি কি করেন? বাড়ীতে কে কে আছেন? নাকি কেউ নেই বলে এক জুয়াড়ির খোঁজে এসছেন?”
“ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাষ্টার্স করেছি কিন্তু এখনও কোনো চাকুরীর চেষ্টা করিনি। ”
“ চাকুরীর চেষ্টা করছেন না, হয়ত প্রয়োজন নেই তাই করছেন না?”
“ না ঠিক তা নয়। অবশ্য চাকরীর চেষ্টা করলে যে তা পেতাম এমনটা দাবী আমি করছি না। আমার ইচ্ছে করল না তাই চেষ্টা করলাম না। ”
“ ইচ্ছে করল না? হা এমনটাই তারা বলে যাদের নিজেদের ড়্গমতা আর যোগ্যতা সম্পর্কে কোনো ভরসা থাকে না। চাকরীর চেষ্টা করেন নি তো বেশ ভালো কিন্তু এখন কি করেন?”
আলেয়া এভাবে বলায় নিজের সম্পর্কে শাহাজাদার মাঝে একটা হতাশার ভাব এল। কিন্তু তা সে অতিক্রম করতে মনস্থ করল।
“ আমার যোগ্যতা সম্পর্কে সে হতাশ হয়েছে--তাকে সত্যটা না বলে আমি পারি না। আমি যা তাই তাকে বলা উচিত--সে আমাকে প্রত্যাখান করতে পারে। কিন্তু আমি এক জুয়াড়ি,...একটা বাজি ধরছি। মনে হয় জীবনের সবচেয়ে বড় বাজিটা এখন ধরছি? ভিন্ন এক অনুভূতি আজ আমাকে তাড়া করছে। জুয়া খেলতে বড় একটা বাজি ধরা বা জেতার পূর্বে যে অনুভূতি আমাকে তাড়া করে, এটা ঠিক তেমনি। জিতলে একটা বড় জিত হবে। কিন্তু হারলে?
--জানিনা। কিন্তু আমার কোনো উপায় নেই। বাজিটা আমাকে ধরতে হবে। আর আমি তা ধরব পুরোপুরি। ” একটু কেশে গলাটা পরিস্কার করে শাহাজাদা জুয়ার বোর্ডে দান ধরার সময় সব মনযোগ নিয়ে যেভাবে তাকায়,আলেয়ার দিকে সেভাবে তাকিয়ে বলে,
“ তুমি তা ভাবতে পার। অন্যরা যেমন আমাকে নিয়ে হতাশ হয়, তুমিও তেমনটা হতে পার,... আমি হতাশ নই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণও দেখি না। বাড়ীতে মা দুই ভাই ভাবী আর তাদের তিন ছেলে মেয়ে আছে। আমি ঠিক কিছু করি না তবে জুয়া খেলি। শাহেদ নামে এক জুয়াড়ির খোঁজে এখানে এসেছি। ”
“ বাহ্! আপনি তো শুধু উচ্চবংশীয় নন? আপনি উঁচুমনের এক অভিজাত ব্যক্তি। তা না হলে এতবড় একটা অপরাধ করেও প্রায় অপরিচিত একজনের কাছে এভাবে বলতে পারলেন? ”
‘ অপরাধ?’ কথাটা শুনে শাহজাদা অবাক হয়ে আলেয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে প্রশ্ন করে,
“ জুয়া খেলা অপরাধ হবে কেন? ” শাহাজাদার এ প্রশ্নটায় আলেয়ার ড়্গোভের মাত্রাটা আরো বেশি হল।
“ জুয়া খেলা অপরাধ নয়? ”
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন