পাঁচ
কিছুটা গোলাকার আকৃতির বিশ ফুট বাই আঠারো ফিটের ঘরটা এবাড়ীর সবচেয়ে ভালো ঘর।
“ তুমি এ ঘরটাতে থাকবে এর তিন দিক খোলা একদিকে আমার ঘর। তোমার কোনো প্রয়োজন হলে আমি সবসময় দেখতে পাব। ” ‘সালমা ’ বলে বিজলী ডাক দেয়,(সালমা আগে থেকে ঘরটা পরিস্কার করছিল)। সালমা তাড়াতাড়ি বলে, ‘জি আপা।’ শাহাজাদা সালমাকে দেখেছে, আজ ভালো করে দেখল। ওর গায়ের রংটা শ্যমলা হলেও তাকে সুন্দরী বলে শাহাজাদা
¯^xKvi করে নিল। বয়স পনের ষোল হবে। চেহারায় বেশ চমক আছে।
“ আজ থেকে ইনি তোর স্যার, ছালাম দে। ” বিজলীর কথায় সালমা তাড়াতাড়ি হাত তুলে ছালাম দেয়।
“ আপা ইনি আমাকে পড়াবেন? ”
“ হ্যাঁ ইনি তোকে পড়াবেন। আগে ঠিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠুক। ” শাহাজাদা প্রতিবাদ করে,
“ না,না,আমি সুস্থ আছি। পড়াতে কোনো অসুবিধা হবে না আমার। ” বিজলী বাধা দেয়।
“ এত ব্যসত্ম হচ্ছ কেন? সময় অনেক পাবে। ” বিজলী সালমাকে তার করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেয়।
“ উনার খাওয়া দাওয়ার দিকে খেয়াল রাখবি,এ দায়িত্বটা তোকে দিলাম। যদিও সবকিছু আমি দেখব,তারপরও তোকে খেয়াল রাখতে বলছি। যা এখন চা নাসত্মার ব্যবস্থা কর। আমারো ড়্গিদে পেয়েছে। ” সালমা মাথার কাপড়টা অরো ভালো করে টেনে দিয়ে ‘জি আচ্ছা’ বলে চলে গেল।
“ দুই বছর ধরে ও আমার কাছে আছে। বলতে পার ওকে কুড়িয়ে পেয়েছি...। ” ‘কুড়িয়ে পেয়েছি’ কথাটা শাহাজাদার মনে হল বিজলী যেন কিছুটা টেনে বলল,একটা ড়্গোভের স্রোত শাহাজাদার উপর বইল!
“ তুমি তো সব কুড়িয়ে পাও, যেমন আমাকে পেয়েছো? ” বিজলী হাসতে হাসতে উত্তর দেয়।
“ না, না তোমাকে কুড়িয়ে পাব কেন? উল্টো তুমি আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছো। যেজন্য বারবার আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছ? ” শাহাজাদা কিছু বলে না,টেবিলে রাখা সিনে ম্যগাজিনটা নিয়ে কভারে সুন্দরী নায়িকার ছবি দেখে। বিজলী হাসতে হাসতে শাহাজাদার কাছে চলে এল। ম্যগাজিনটা হাতে নিয়ে বলল ,
“ জানি তুমি আমাকে ঘৃনা কর, তোমার ঘৃনা ছাড়া পাওয়া ছাড়া আর কিছু আশা করি না ঠিক। তবু আমার জন্য না হোক অন্য মানুষের প্রতি, হোক না সে নিম্ন সত্মরের,কিছুটা সহানুভূতি রাখলে মনে হয় কোনো ড়্গতি হবে না তোমার? ঘৃনা অপমান যাই কর আমি কিছু মনে করব না, করব না কারণ শুধু তোমার নয় হয়ত এজগতের সবার ঘৃনা পাওয়ার যোগ্য আমি? ” বলতে বলতে বিজলীর গলাটা যেন ধরে এল! ‘সে কি নিজের অতীতের জন্য লজ্জিত? ’ প্রশ্নটা শাহাজাদার মনে এলেও সে কিছু বলে না। বিজলী শাহাজাদার হাতের ম্যাগজিনের কভারে নায়িকার ছবিটা দেখিয়ে বলে,
“ কি দেখছ এত? ও কি আমার চেয়ে সুন্দরী? ” শাহাজাদা কিছু বলে না, বিজলীর মুখের দিকে তাকায়। বিজলীর মুখে এখন হাসি! হাসিটা যেন জগতের সব রহস্যে ভরা!
“ জানি মুখে তুমি বলবে ও আমার চেয়ে সুন্দরী কিন্তু তোমার মন বলছে ভিন্ন কথা। অবশ্য তুমি এমনটা নও, তবু আমাকে নিয়ে তোমার এ লুকোচুরি কেন? তবে আমি এও জানি একদিন তোমার এ লুকোচুরি থাকবে না। সেদিন আমাকে নিয়ে ভিতর বাহিরে একইরকম ভাববে, বলবে, সেদিন সত্যি আমাকে ভালোবাসবে। থাক ওসব, সালমাকে কুড়িয়ে পেয়েছি তা ঠিক নয়। আমার ভাই রহমত সালমাকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। রহমতকে তো তুমি দেখেছো? সেদিন যখন আহত অবস্থায় তোমাকে পাই তখন রহমত আমার সাথে ছিল। এখন চিনতে পারছ? ” শাহাজাদা মাথা নাড়ে।
“ ওর নাম রহমত। সবাই ওকে উর্দ্দু রহমত বলে জানে। দেখতে গোবেচারা বলে মনে হয় তাই না? কিন্তু তা নয়। ওরেঃ বাবা! ওর নামে কয়েকটা খুনের মামলা সহ প্রায় ডজন দুই মামলা রয়েছে। খুন হয়ত করেছে, না হলে মামলা হবে কেন বল? এনিয়ে ওকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। ও নিজের থেকে যা বলে আর লোকমুখে যা শুনি তাতেই সব বুঝতে পারি। পুলিশের খাতায় রহমত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে রহমতকে নিয়ে তুমি ভেব না, ও বেঁচে থাকতে তোমার কোন ড়্গতি কেউ করতে পারবে না। ”
“ আমার ড়্গতি নিয়ে আমি ভাবি না, ভাবছি তোমাকে নিয়ে। ”
“ আমাকে নিয়ে,কেন? ও আমার ভাই,এমন একটা ভাই আছে বলেই আমি নিশ্চিনেত্ম আছি। ”
“ নিশ্চিনেত্ম আছ নয়,বল চুঁটিয়ে ব্যবসা করছ!...করবে না কেন বল? এমন এক গুনধর ভাই সাথে থাকলে, সবদিক থেকে তার পয়মনত্ম। তুমি বলেছিলে শুধু একটা বোন তোমার ছিল, তা এ ভাইটা আবার জুটল কোথ্থেকে? অবশ্য এসব লাইনে এরকম ভাই, বোন, মাসির অভাব হয় না। এরা না থাকলে ব্যবসাটা চলবে না? শুধু তাই না শুনেছি মাথার উপর বসে এরা সব চালায় আর আয়ের প্রায় সবটা খেয়ে নেয়। তবে সব দেখে মনে হয়,ও তোমার নয় উল্টো তুমি ওর মাথার উপর বসে আছ। তা রহমতের শেয়ারটা কত? ”
বিজলী গভীর মনোযোগ দিয়ে সব শুনল। ওর মুখে কোনো রাগ বা বিরক্তি নেই,আগের মত এবার সে হাসল না। ভিন্ন ধরণের একটা অভিব্যক্তি শাহাজাদা তার মাঝে লড়্গ্য করল। অভিব্যত্তিটা শুধু ভিন্ন নয়, শাহাজাদা যেন ভিন্ন এক বিজলীকে দেখছে! তবে সে খুব বেশি অবাক হল না, বরং ‘এর মত একজনের জন্য এসব নতুন কিছু না’ এটা ভেবে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে চাইল। কিন্তু বিজলীর কথা শুনে শাহাজাদাকে এখন নতুন করে সব ভাবতে হল।
“ দেখ মানুষ শুধু নিজের জন্য বাঁচে বা নিজের জন্য সব করে এটা সত্য নয়। অবশ্য এরকম একটা ধারণা আমাদের মাঝে গেড়ে বসে আছে,তবে মানুষের জন্য কখনো তা সত্য হতে পারে না। এটা শুধু আমার বিশ্বাস না তুমিও নিশ্চয় একমত হবে? অবশ্য তোমার পড়্গে আমার সাথে একমত হওয়াটা বেশ কঠিন, অনত্মতঃ বাহ্যিক দিক থেকে--আমি তা জানি। তবে নিশ্চয় তোমার মন বলছে এটাই সত্য আর এ সত্যটাই আমি পালন করার চেষ্টা করছি। তুমি জুয়া খেল তা কি শুধু নিজের জন্য? ”
শাহাজাদা নিজের সম্পর্কে একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হল যার উত্তর সে জানে না। সে নিরোত্তর থাকে। বিজলী তার হয়ে উত্তরটা দিতে চায়।
“ বড় বড় দান জেতার ¯^cœ তুমি দেখ, দেখবে একদিন বড় একটা দান জিতেছ,জিতেছ হয়ত তা অন্য কারো জন্য? হয়ত বা ঐ দানটা জেতার পর তুমি আর কোনোদিন জুয়া খেলবে না। বলতে পার এসব সবকিছু সম্ভবনা বা আমার অনুমান মাত্র। অবশ্য আমার মত এক নষ্টা মেয়ের ভাবনা বা অনুমানকে তুমি গুরম্নত্ব দিবে এমনটা আশা করি না। আমি একটা নষ্টা মেয়ে এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। তোমার সাথে পরিচয়ের পূর্বে মনে হয় এ নিয়ে আমার কোনো আড়্গেপ ছিল না সত্য, এখনকার কথা অবশ্য ভিন্ন...”
“ ভিন্ন কেন? এখন কি লজ্জায় মরে যাচ্ছ? আহ্ আর কত ঢ়ং যে দেখাবে? ” শাহাজাদার কথা শুনে বরাবরের মত বিজলী এবার হাসল। তবে তার হাসির আড়ালে এক অব্যক্ত দুঃখ যেন লুকিয়ে রয়েছে যা সে লুকাতে পারছে না! ‘সে কি লজ্জিত? ’ প্রশ্নটা মনে এলেও শাহাজাদা কিছু বলে না।
“ রং, ঢ়ং যাই বল এ নিয়ে আমি কিছু বলছি না। যা বলছিলাম তা শোন। আমি নষ্টা কিন্তু নিজ সামর্থ্যের মাঝে কারো নষ্ট হওয়াটা যদি রোধ করতে না পারি তা হলে আমার আড়্গেপের কোনো সীমা থাকবে না, নিজেকে ড়্গমা করতে পারব না। সালমাকে নিষিদ্ধ পলস্নীতে বিক্রি করা হয়েছিল, কেন জানি রহমত ওকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে? এসব ব্যবসার সাথে ও যদি নিজে যুক্ত থেকে থাকে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই? কিন্তু তারপরও মেয়েটাকে উদ্ধার করে সে নিয়ে আসে? হয়ত সালমাকে ওর পছন্দ হয়েছে বা তাকে ভালোবাসে। আমি অবশ্য কিছু জানতে চাই নি। ” বিজলীর কথাগুলো শাহাজাদা মনোযোগ দিয়ে শুনল। কথাগুলো তার মনে অনেকগুলো ভাবনা নিয়ে এল। ভাবনাগুলো তাকে অন্যমনস্ক করল! বিজলীর কথায় তার
mwš^Z ফিরে এল।
“ রহমতের সাথে আমার সম্পর্কটা নিয়ে তুমি বেশ ভাবনায় আছ বলে মনে হয়?
--বলতে পার রহমতকেও আমি কুড়িয়ে পেয়েছি। অবাক হলে? তা হতেই পার। ধর্ষণের অভিযোগে ও অভিযুক্ত হয়েছিল। এদেশের খুব নামকরা এক পরিবারের মেয়ে ধর্ষিতা হয়েছিল। তাদের ড়্গমতা আর প্রভাব এতদূর যে ওর বাঁচার কোনো আশা ছিল না।
--রহমত আমাকে বলে সে ধর্ষণ করেনি, আমি ওকে বিশ্বাস করেছিলাম।
--আমার বিশ্বাস রহমত আমার সে বিশ্বাসের অমর্যাদা করেনি। তুমি তো কোনোদিক থেকে আমাকে বিশ্বাস করতেই চাও না? আমাকে বিশ্বাস করলে তুমি কোনোদিন ঠকবে না। অবশ্য তোমাকে জোর করতে চাই না। হ্যাঁ যা বলছিলাম এক গভীর রাতে হোটেল সোঁনারগাঁ থেকে ফিরছিলাম...” বিজলীর কথায় শাহাজাদা বিরক্ত হয়।
“ গভীর রাতে কেন? ”
জগতের সব লজ্জা আর A¯^w¯Í বিজলীর মাঝে এসে যেন ভির করে! শাহাজাদার জানা মতে ভয়ানক এ বাচাল মেয়েটা মুহূর্তে যেন তার সব কথা হারিয়ে বোবা হয়ে পড়ল! কোনো কথা সে বলছে না। ‘ সে কি সবকিছুর জন্য লজ্জিত? ’ এ প্রশ্নটা আবার মনে এলেও শাহাজাদা ভীষণ ক্ষুব্ধ হল।
“ তোমাকে বারবার বলেছি ন্যাকামো করনা। গেছলে তো দেহ বেঁচতে, তা নিয়ে ভণিতা কেন শুনি? আহা! জিজ্ঞেস করতেই উনি লজ্জাবতী লতার মত একেবারে মিঁইয়ে পড়লেন! আর দোষটা তো আমারই। আমার দোষ বা বলি কেন? ওই যে কথায় বলে না, ‘সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে নরক,’ আমার হয়েছেটা তাই। এর সাথে থেকে আমার নিজের মাঝে এইসব নোংরা বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে কেমন জানি একটা ইচ্ছে জাগে! মনে হয় শুধু একে নয় এ স্থানটা ত্যাগ করে আমার চলে যাওয়া উচিৎ। তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারলে আজকেই, এখনি। ”
শাহাজাদা শুধু মুখে বলল না বিজলীর বাড়ী থেকে চলে যেতে মনস্থির করে ফেলল। নিজের উপর ড়্গোভটা সে এ মুহূর্তে প্রবল হয়ে উঠতে দেখল। বিজলীকে নয় সবকিছুর জন্য নিজেকে সে দায়ী মনে করল। কিন্তু নিজের উপর কেন এতটা বিক্ষুব্ধ সে হল শাহাজাদা তা জানে না,জানার আগ্রহও যেন তার নেই। শুধু এ মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাওয়াটাই একমাত্র কাজ বলে সে ঠিক করল। সোফা থেকে উঠে গিয়ে ঘরের এককোঁনে রাখা ব্যাগটা হাতে তুলে নিল। ‘ আমি চললাম ’ বলে দরজার দিকে পা বাড়াল।
এতড়্গণে বিজলীর হুঁশ ফিরল। শাহাজাদার সামনে গিয়ে তার একটা হাত ধরল। মুখে তার হাসিটা আবার ফিরে এসেছে।
“ এখন এমুহূর্তে তুমি কোথায়ও যেতে পার না। ”
“ যেতে পারি না কেন? তুমি কি আমাকে জোর করে আঁটকাবে? তোমার ভাই সেই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভয় দেখাবে? ”
“ তোমাকে কেন, আমি কাউকে ভয় দেখাই না। ভয় দেখানো আমি পছন্দ করি না, আমি নিজেও ভয় পাই না। অবশ্য তোমাকে হারানোর ভয়টা এখন আমাকে তাড়া করছে! তোমাকে বলতে চাই না, তুমি বিরক্ত হবে। ভয় নয় অধিকার, অধিকার আছে বলেই তোমাকে যেতে নিষেধ করছি। ”
“ কিসের অধিকার? আমার উপর তোমার কিসের অধিকার? ”
“ আধিকার আমার নয়, তোমার ছাত্রী সালমার। তাকে তুমি কথা দিয়েছো পড়াবে বলে? তাকে শিড়্গাদান না করে কি তুমি চলে যাবে? ” শাহাজাদার হাতে ধরা ব্যাগটা ধপ করে সেখানে পরে গেল! বিজলী এবার তার ¯^fvem~jf হাসিটা হাসল না, তার সে চপলতাও এখন নেই। সে খুব শানত্ম, ধীর স্থির। কন্ঠটা যেন আরোও বেশি শানত্ম!
“ নিজেকে তুমি এক সম্ভ্রানত্ম বংশীয় বলে দাবী কর? বংশীয় বা সম্ভ্রানত্ম বলতে কি বুঝায় তা আমি ঠিক জানি না? এ নিয়ে ভাবি না। তবে নিঃসন্দেহে তুমি একজন সম্ভ্রানত্ম--সবদিক থেকে। আমার বিশ্বাস প্রেম ভালোবাসার ড়্গেত্রেও তুমি সম্ভ্রানত্ম রইবে, এমনকি তা যদি আমার সাথেও হয়। ”
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন